You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইপিআর হাবিলদার বীর প্রতীক বাচ্চু মিয়া

বাচ্চু মিয়া, বীর প্রতীক (১৯৩৮-২০০৯) ইপিআর হাবিলদার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৮ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সোনা মিয়া মুন্সি ও মাতার নাম দুরুতুন নেছা। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বাচ্চু মিয়া ইপিআর বাহিনীতে চাকরি
করতেন। এ-সময় তিনি সিলেটের চিমটিখিল বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। দেশের রাজনীতি এবং বাঙালিদের স্বার্থের বিষয়ে তিনি খুবই সচেতন ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ৩ নম্বর সেক্টরে এবং পরবর্তী সময়ে ‘এস’ ফোর্সের অধীনে বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এর মধ্যে মাধবপুর যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন আবদুল মতিন, বীর প্রতীক (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল)-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকার শাহজাদপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্তিশালী দল শাহজাদপুর ব্রিজের অপর প্রান্তে অবস্থান নেয়। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে হানাদার বাহিনী তাঁদের অবস্থানের ওপর জঙ্গি বিমান থেকে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধারা এ আক্রমণে পিছু হটে মাধবপুরে অবস্থান নেন। তাঁরা পাল্টা আক্রমণ না করে হানাদার বাহিনীর সম্মুখের দিকে অগ্রসরের অপেক্ষায় থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছিল মাত্র ৪টি এলএমজি। তা নিয়ে প্রতিকূলতার মধ্যে হাবিলদার বাচ্চু মিয়া কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে ফাঁদ পাতেন। বিপরীত দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সামনের দিকে এগুতে থাকে। রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্র বাচ্চু মিয়া ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ আকস্মিক আক্রমণে কয়েকজন হানাদার সদস্য হতাহত হয়। এরপর বাচ্চু মিয়া তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত পশ্চাদপসরণ করেন। এ-যুদ্ধে হাবিলদার বাচ্চু মিয়া অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার হাবিলদার বাচ্চু মিয়াকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মিয়া ২০০৯ সালের ১০ই মে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী ছলুফা বেগম। এ দম্পতির ৫ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!