বীর প্রতীক বাচ্চু মিয়া
বাচ্চু মিয়া, বীর প্রতীক (১৯৪৫-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মো. গিয়াস উদ্দিন সমসের। ৬ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর পিতার নাম সোনা মিয়া মুন্সি, মাতার নাম আছিয়া খাতুন সিকদার।
দেশের রাজনীতি এবং বাঙালিদের স্বার্থের বিষয়ে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। দেশে চলমান স্বাধীনতা আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি খোঁজ-খবর রাখতেন। ১৯৭১ সালে মুজাহিদ বাহিনীর সদস্য হিসেবে বাচ্চু মিয়া আশুগঞ্জে দায়িত্বরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী কর্তৃক হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আশুগঞ্জের ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি সেখানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজে সক্রিয় হন। কিছুদিন পর তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুরে মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বাধীন ২য় ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হন এবং তেলিয়াপাড়া ক্যাম্প থেকে কিছুদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ২য় ইস্ট বেঙ্গলের সৈনিক হিসেবে অন্য অনেকের সঙ্গে বাচ্চু মিয়াকে আশুগঞ্জে নিযুক্ত করা হয়। ১৫ই এপ্রিল পাকবাহিনী আশুগঞ্জের প্রতিরক্ষা অবস্থানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে। তারা মেঘনা নদীতে অবস্থানরত নৌবহর এবং যুদ্ধ বিমান দ্বারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলা বর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন।
বাচ্চু মিয়াসহ মোট ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা সোনারামপুর ওয়াপদা সংলগ্ন এক পরিখায় থেকে যুদ্ধ করছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধের পর তাঁর অনেক সহযোদ্ধা পিছু হটলেও বাচ্চু মিয়া ও দুই সহযোদ্ধা পরিখার মধ্যে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে বাচ্চু মিয়াসহ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন। হানাদাররা তাঁদের বেয়নেট খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। তাদের মরদেহ পাওয়া যায়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শনসহ জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার শহীদ বাচ্চু মিয়াকে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রী সামছুন্নাহার রেনু। এ দম্পতির ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [জালাল আহমেদ ও রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড