You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে বাজিতপুর উপজেলা (কিশোরগঞ্জ)

বাজিতপুর উপজেলা (কিশোরগঞ্জ) ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও ঘোড়াউত্রা নদী-সহ অসংখ্য নদী ও খাল দ্বারা বেষ্টিত। ১৮২৩ সালের ১৫ই আগস্ট এ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার।
বাজিতপুর খুবই রাজনীতি সচেতন একটি এলাকা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাজিতপুরের বিপ্লবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাজিতপুরে বিপ্লবীদের ‘অনুশলীন’ দলের ব্যাপক কার্যক্রম ছিল এবং এ দলের কয়েকজন বিপ্লবীকে দ্বীপান্তর ও দীর্ঘ কারাবরণ করতে হয়। ১৯৪৮ সালে ভাষা-আন্দোলন-এর প্রথম পর্বে বাজিতপুরে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা- আন্দোলনের সময় এ এলাকা মিছিল-সমাবেশ আর প্রতিবাদে প্রকম্পিত হয়। পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলন- সংগ্রামেও বাজিতপুরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে পরিচালিত ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ৭১-এর অসহযোগ-আন্দোলন-এ এখানকার জনগণ বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১লা মার্চ স্থগিত ঘোষিত হলে সারাদেশের মতো বাজিতপুরেও সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাজিতপুরে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্ৰামপরিষদ গঠন করা হয়।
পরিষদের সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন যথাক্রমে মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. শাহজাহান মিয়া। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজিতপুরের মনজুর আহমদ এমপিএ-কে সভাপতি এবং বাজিতপুর থানা আওয়ামী লীগ-এর সেক্রেটারি ওয়াজেদ আলী শাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। বাজিতপুরের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এ কমিটির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে।
২৩শে মার্চ বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ-সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রনেতা লতিফুর রহমান হেলাল (পিতা হাফিজুর রহমান, বাজিতপুর; বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র), বদরুদ্দোজা বাচ্চু (পিতা আজিজুর রহমান কেন্তু, বাজিতপুর; ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র), মাহতাব উদ্দিন (পিতা মেলু মিয়া, বাজিতপুর; বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র) প্রমুখ। ঐদিন রাতের ট্রেনে এ তিন ছাত্রনেতা সাংবাদিক মনোজসহ ঢাকায় যান। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল জেনারেল ইয়াহিয়া খান কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা অর্পণ প্রত্যক্ষ করা। তাঁরা রাত্রি যাপনের জন্য বাজিতপুরের ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের বাসিন্দা শেখরের কক্ষে যান এবং ২৫শে মার্চ রাতে হেলাল, বাচ্চু ও মাহতাব হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। ২৬শে মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত জাতীয় পতাকা বাজিতপুর টাউন হলে উত্তোলন করে। সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মনজুর আহমদ এমপিএ-এর বাড়িতে একটি সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে এর সার্বিক দায়িত্ব দেয়া হয় প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইন্দুভূষণ চক্রবর্তীকে।
ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী ও আন্দামান-ফেরত ইন্দু দাসের তত্ত্বাবধানে বাজিতপুর ডাকবাংলোর মাঠে উৎসাহী যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষক ছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হোসেন আলী ও ল্যান্স নায়েক আ. সাত্তার। পরে প্রশিক্ষণের স্থান পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এম মফিজুল ইসলাম আফ্রাদের তত্ত্বাবধানে বাজিতপুর পাইলট হাইস্কুলে স্থানান্তর করা হয়। ১৯শে এপ্রিল বাজিতপুর থানা থেকে ১৮টি রাইফেল এনে যুবকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়।
সরারচর হাইস্কুলের শিক্ষক শাহ্ মজলুল হককে সভাপতি করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট সরারচর ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। ক্রমে বাজিতপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বাজারভিত্তিক সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটিও গঠিত হয়।
বাজিতপুর থানার মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ কমান্ডাররা হলেন- রমিজ উদ্দিন আহমেদ (পিউরী), মো. হাসান উদ্দিন (সরিষাপুর), মজিবুর রহমান (মাছিমপুর), শামসুর রহমান (পিউরী), আব্দুল মান্নান ভূঞা মনু (সুজাতপুর) এবং বিএলএফ কমান্ডার রফিকুল ইসলাম (লালখারচর)।
বাজিতপুর থানার মুক্তিযোদ্ধা সেকশন কমান্ডাররা হলেন- ডা. মোহাম্মদ আলী (মাঝিরচর), ভানু মোহন দাস (ধুবি পাথর), আব্দুল মান্নান (জোয়ারিয়া), সামসুল আলম ভূঞা (পিরিজপুর), মিজবাহ উদ্দিন আহমদ (সরিষাপুর), মো. ইব্রাহিম (পাটুলী), খুর্শিদ আলম (কামালপুর), আবু সিদ্দিক (আশিনুল), গিয়াস উদ্দিন আহমদ (উত্তর সরারচর), মহিউদ্দিন আহমদ (গুরুই)। মহিউদ্দিন আহমদের বাড়ি নিকলী হলেও তাঁর দলের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বাজিতপুরের। এ দল নিকলী-বাজিতপুরের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোতে অংশগ্রহণ করে।
হিলচিয়া সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডাররা হলেন- অধ্যাপক ইয়াকুব আলী (ছয়চিড়া), আব্দুল বারী খান (কাটাবড়িয়া), আব্দুল হাই ওরফে জারু মিয়া (শোভারামপুর), আব্দুল মোতালিব বসু (গুরুই)। বাজিতপুর উপজেলায় একক কোনো থানা কমান্ডার ছিলেন না। গ্রুপ কমান্ডাররা যৌথভাবে ও অবস্থাভেদে স্বতন্ত্রভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতেন।
১৪ই এপ্রিল ভোর থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্থল ও আকাশ পথে ভৈরববাজারে ত্রিমুখী আক্রমণ করে। হেলিকপ্টার থেকে প্রচুর ছত্রীসেনা নামানো হয়। এ খবরে স্থানীয় সংগ্রামী জনতা বাজিতপুর থানার ভাগলপুর থেকে হালিমপুর পর্যন্ত রেললাইন তুলে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের এসব চেষ্টা সত্ত্বেও ১৯শে এপ্রিলের মধ্যে বাজিতপুর পাকবাহিনী ও রাজাকারদের দখলে চলে যায়। ১৮ই এপ্রিল স্থানীয় পাকিস্তানপন্থী কতিপয় দালালের ইন্ধনে বাজিতপুর থেকে স্বাধীন বাংলার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো হয়। এসব দালাল একত্রিত হয়ে স্থানীয় আলোছায়া সিনেমা হলে মুসলিম লীগ-এর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠন করে। সিনেমা হলে সমাবেশ চলাকালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছদ্মবেশে অকুস্থলে প্রবেশ করে পাকিস্তানের পতাকায় গুলি ছোড়েন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দুঃসাহসী ভূমিকায় মুসলিম লীগের সভা মুহূর্তেই পণ্ড হয়ে যায়।
১৪ই এপ্রিল ভৈরববাজারে হানাদার বাহিনীর দখল প্রতিষ্ঠার পর ১৫ই এপ্রিল থেকে তারা দ্রুত রেললাইন মেরামত শুরু করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেরামত কাজ করে ১৯শে এপ্রিলের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
১৯শে এপ্রিল বাজিতপুরের পাকিস্তানপন্থী নেতারা দল বেঁধে কিশোরগঞ্জ চলে যায় এবং মাওলানা মুসলেহ উদ্দিনের মাধ্যমে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। নওহাটা গ্রামের সেকান্দর মিয়া ও মুর্শিদ মিয়া ভৈরবে থাকাকালে (১৪ই এপ্রিলের পরপর) হানাদার বাহিনীর কাছে চিঠি লিখে তাদের বাজিতপুর আসার অনুরোধ করে। ১৯শে এপ্রিল পাকবাহিনী রেলগাড়িতে করে সরারচর ইউনিয়ন তথা বাজিতপুর থানাধীন এলাকায় অনুপ্রবেশ করে। পৌঁছার পরই তারা সরারচর রেলস্টেশনের আশেপাশে তাণ্ডব চালায়। বাজিতপুর সদরে সেনাবাহিনীর স্থায়ী কোনো ক্যাম্প ছিল না। বাজিতপুর থানা সদরে একটি বড় রাজাকার ক্যাম্প ছিল। সরারচর শিবনাথ হাইস্কুলের রহিমা খাতুন ছাত্রাবাসে আগস্ট মাসের প্রথমদিকে একটি স্থায়ী পাকিস্তানি মিলিশিয়া ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। শান্তি কমিটির সদস্যরা গ্রামের দরিদ্র অথচ অনুগত লোকদের মধ্য থেকে রাজাকার বাছাই করে মহকুমা সদরে প্রেরণ করত। মিলিশিয়াদের পশ্চিম পাকিস্তানে রিক্রুট করে উন্নততর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এদেশে নিয়োজিত করা হয়েছিল।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মাওলানা মুসলেহ উদ্দিনকে সভাপতি করে কিশোরগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। একই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজিতপুর থানার সরারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মোক্তারকে আহ্বায়ক ও বাজিতপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ বোরহান কুফিয়া (পিনু মিয়া)-কে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কতিপয় পৌর কমিশনার ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে শান্তি কমিটির সদস্য করা হয়। তাছাড়া বাজিতপুর থানা মুসলিম লীগের নেতাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শান্তি কমিটির নামে বাজিতপুরের মুসলিম লীগের নেতারা যাবতীয় অপকর্মের হোতা হিসেবে কাজ করত।
জুন মাসের প্রথমদিকে বাজিতপুরের অনুগত লোকদের মধ্য থেকে শান্তি কমিটির নেতারা রাজাকার বাছাই করে। তাদের মহকুমা সদর কিশোরগঞ্জে প্রেরণ করা হলে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ দিয়ে থানায় ফেরত পাঠানো হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রাজাকারদের দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামে- গঞ্জে অপারেশনে গেলে তাদের পথ দেখিয়ে নেয়া। এছাড়া রাজাকারদের রেলসেতু ও রেললাইন পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্নর মোনায়েম খানের বাড়ি ছিল বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর গ্রামে। এজন্য এখানে মুসলিম লীগ ও রাজাকারদের বিশেষ তৎপরতা ছিল। বাজিতপুর উপজেলার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে মধু মিয়া (আলিয়াবাদ), মতি মেম্বার (সরারচর), মুসা মিয়া (পৈলানপুর), সেকান্দর আলী (সাহাপুর), মুর্শিদ মিয়া (সাহাপুর), সুলতান (দিঘিরপাড়; ‘সুলতান হাজী’ নামে কুখ্যাত এ ব্যক্তি হানাদারদের মনোরঞ্জনের জন্য অপকর্মে লিপ্ত ছিল), সাফি মিয়া (আলিয়াবাদ), নশা মিয়া (আলিয়াবাদ), কেন্তু খাঁ (আলিয়াবাদ), ইশাদ মিয়া (আলিয়াবাদ), মধু মিয়া (সরারচর; জুতা ব্যবসায়ী), মালেক মুক্তার (কৈকুড়ি), মুসলিম চেয়ারম্যান (সরারচর; স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
১৯শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভৈরববাজার থেকে ট্রেনে করে সরারচর রেলস্টেশনে পৌঁছে। মধ্যরাতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা পাশের মেথরপট্টিতে হানা দেয় এবং একই ঘরে দুজন নারীর ওপর পিতা-মাতার সামনে রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে এ নির্যাতিত নারীরা বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
একই দিন অন্য একটি ট্রেন দুপুর আড়াইটার দিকে ভৈরববাজার থেকে হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সরারচর রেলস্টেশন পেরিয়ে বাজার রেলগেটে থামে। ট্রেন থেকে নেমে সৈন্যরা বাজারের রামধনী কালোয়ার নামে একজন উড়িয়া কুলিকে গুলি করে হত্যা করে।
২০শে এপ্রিল মুসলিম লীগের পেটোয়া বাহিনীর কুখ্যাত মুসা গুন্ডার নেতৃত্বে বাজিতপুর সদরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। সাহাপুর গ্রামের রাজাকার সেকান্দর ও মুর্শিদ মিয়া হানাদারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করত। তারা তাদের মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের সন্ধান দিত। তাদের বাড়ি থেকে ধরে আনত এবং হানাদারদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি যেত। এরা অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইন্দু দাস, প্রশিক্ষক হোসেন আলী ও আব্দুস সাত্তারকে ধরে এনে নির্যাতন শেষে ২রা মে হানাদারদের হাতে তুলে দেয়। এরা একই দিন শিক্ষক এ কে মোজাম্মেল হক (জজ মিয়া) এবং তাঁর ছোট ভাই নুরুল ইসলাম খানকেও ধরে নিয়ে যায়।
৪ঠা মে হানাদার বাহিনী স্থানীয় দালালদের সহায়তায় বসাকপাড়া, পালপাড়া, পাগলারচর, পূর্ব বাজিতপুর, বসন্তপুর, মথুরাপুর, নান্দিনা, পৈলানপুর, চন্দ্রগ্রাম, নিতারকান্দি ইত্যাদি গ্রামে অত্যাচার ও নিধনযজ্ঞ চালায়। হত্যার সঙ্গে চলে ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ। দুই থেকে আড়াইশ নিরীহ মানুষ এ তাণ্ডবে প্রাণ হারায়। এ হত্যাকাণ্ড বাজিতপুর ৪ঠা মে গণহত্যা নামে পরিচিত। রাজাকারদের হাতে আটক অসহায় মানুষদের গরুর মতো বেঁধে গাদাগাদি করে ট্রাকে তোলা হয়। পথে বাজিতপুর ব্রিজ, নিতারকান্দি শ্মশানখোলা, রাহেলা গ্রামের পাশে ২০ জন মানুষকে গুলি করে চলন্ত ট্রাক থেকে সিএন্ডবি রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। বাজিতপুর দেওয়ানি আদালতের পিয়ন কুরুক্ষেত্র সাহা (চন্দ্রগ্রাম) গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। ধরে নিয়ে আসা ৬ জন ধর্ষিত ও নির্যাতিত নারীকে ৬ই মে আশুগঞ্জের খোলা মাঠে বিধ্বস্ত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়। একইদিন নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১৫-২০ জনের একদল অসহায় মানুষকে অর্ধমৃত অবস্থায় মেথিকান্দা রেলস্টেশনে ছেড়ে দেয়া হয়। এ দলে কয়েকজন অবিবাহিত মেয়েও ছিল। বাকিদের ভৈরব রেলওয়ে ব্রিজের নিচে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়।
পৌরসভার বাইরে পূর্বদিকে দিঘিরপাড়, পাটুলী, নোয়াগাঁও, সাহাপুর ও ঘাগটিয়া অঞ্চলে ৪ঠা মে হানাদার বাহিনীর তাণ্ডব চলে। এদিন পাকবাহিনীর অন্য একটি দল হিলচিয়ার দিকে যায়। তাদের আসার সংবাদ আগেই পৌঁছে যাওয়ায় অনেকেই নিরাপদ স্থানে সরে গিয়েছিল। তবু হিলচিয়া নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় ২ জন জেলেকে হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে।
১৩ই মে সকালবেলা একদল পাকিস্তানি সেনা কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনযোগে সরারচর রেলস্টেশনে এসে কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে শিমুলতলা, নিতারকান্দি, চন্দ্রগ্রাম ও জনিদপুর গ্রামে হামলা চালায়। তারা এসব গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের বাড়িঘর ঘেরাও, অনেককে আটক, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ এবং নারীদের ওপর নির্মম পাশবিকতা চালায়। এ ঘটনা – সরারচর পাশবিকতা- নামে পরিচিতি পায়।
মে মাসের শেষদিকে হানাদাররা কিশোরগঞ্জ থেকে সরারচর বাজারে এসে দোসরদের সহায়তায় হিন্দু ব্যবসায়ী ও স্বাধীনতাপন্থীদের ধান-পাটসহ বিভিন্ন পণ্যে ভরা গুদামঘর পুড়িয়ে দেয়। তারা মূল্যবান দ্রব্যাদি ও নগদ অর্থ লুটপাট করে নেয়।
২৭শে আগস্ট সরারচর বাজারের আশপাশের গ্রাম থেকে মিলিশিয়ারা ১৯ জন সাধারণ মানুষকে ধরে আনে। তাদের একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং বাকি ১৮ জনকে কিশোরগঞ্জ শহরের উত্তরে মুসল্লীর কালীগঞ্জ ব্রিজে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা কালীগঞ্জ ব্রিজ গণহত্যা নামে পরিচিত। ঐদিন বিভিন্ন গ্রামের অনেক বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এভাবে প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো স্থানে চলত লুটতরাজ, মারপিট, যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুন দেয়া, সন্দেহভাজনদের ধরে নেয়া ও নির্যাতন করে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা।
বাজিতপুর উপজেলার সরারচর শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের বেগম রহিমা ছাত্রাবাসটি নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাজিতপুর ডাকবাংলোতেও এ-ধরনের নির্যাতন চলত। রাজাকারদের প্রধান ক্যাম্প বাজিতপুর থানায়ও সাধারণ মানুষদের ওপর নির্যাতন করা হতো।
হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কর্তৃক সরারচর মিলিশিয়া ক্যাম্প থেকে উত্তরদিকে কিশোরগঞ্জ-সরারচর রেললাইনের ওপর হালিমপুরের উত্তরে বগামারা ব্রিজের কাছে অনেক লোককে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়। সরারচর রেলগেটের কাছে একটি বধ্যভূমি রয়েছে। ২১শে এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুর শহরের আলোছায়া সিনেমা হলে পাকিস্তানপন্থীদের সভায় আক্রমণ করেন এবং পাকিস্তানের পতাকায় আগুন দেন।
২২শে মে বাজিতপুর থানার নোয়াপাড়ার আবু আহমেদ মান্নাফীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের গেরিলা দল প্রথম বাজিতপুর অঞ্চলে প্রবেশ করে। এ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা কুলিয়ারচর লঞ্চঘাটে পাকিস্তানি সেনাদের একটি টহল লঞ্চ আক্রমণ করে বিকল করে দেন।
৪ঠা জুন বাজিতপুর ডাকবাংলোতে অবস্থিত পুলিশ সার্কেল ইন্সপেক্টরের বাসভবনে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বাজিতপুর সদর তহসিল অফিস আক্রমণ করে মূল্যবান কাগজপত্র জ্বালিয়ে দেন।
৬ই জুন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরারচর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস আক্রমণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল করে দেয়া হয়। ঐ রাতেই হানাদার সৈন্যদের বহনকারী ট্রেন ধ্বংসের লক্ষ্যে গেরিলারা পীরপুরে রেললাইনে মাইন পুঁতে রাখেন। পাকিস্তানি দালালদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য মহকুমা শান্তি কমিটির সভাপতি মুসলেহ উদ্দিনের বাড়িতে কাফনের কাপড় প্রেরণ করেন।
২৫শে জুন সেনাসদস্য নায়েক হারুন-অর-র -রশিদের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি গেরিলা দল বাজিতপুর থানা আক্রমণ করে। কয়েক মিনিটেই থানার ওসি-সহ পুরো পুলিশ বাহিনী nআত্মসমর্পণ করে। হারুন-অর-রশিদের নির্দেশে গেরিলারা থানার সমুদয় অস্ত্র হস্তগত করেন। এ বাহিনীর কয়েকজন সদস্য এরপর বাজিতপুরের ত্রাস ও গুন্ডা বাহিনীর প্রধান মুসার বাড়ি ঘেরাও করেন। বিক্ষুব্ধ জনতাও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। তারা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে অগ্নিসংযোগ করলে মুসা গুন্ডা মারা যায়। সে রাতে জনতা আরো কিছু রাজাকারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। গোলাগুলির শব্দ শুনে এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখে পালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে বাজিতপুরের মুসলিম লীগ নেতা মধু মিয়া পুকুরপাড়ে হার্টফেল করে মারা যায়।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে হিলচিয়া ক্যাম্পের সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী ছাতিরচর হাওর অঞ্চলে টহলরত ৬৬ জন সদস্যের একটি রাজাকার দলকে আত্মসমর্পণ করায়।
১৬ই অক্টোবর দুপুরবেলা কয়েকজন গেরিলাযোদ্ধা মিলে সরারচর-বাজিতপুর সড়কের সরিষাপুর-নকলা রাস্তার সংযোগস্থলে হানাদারদের রেশনবাহী যানবাহনে অপারেশন চালান। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব এখানে শহীদ হন। তাঁর মৃত্যুর খবরে মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুর মুক্ত করার শপথ নেন৷
আগস্টের শেষ সপ্তাহে বাজিতপুর বাজারে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংকে (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) অধ্যাপক ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে অপারেশন চালানো হয়। এ অপারেশনের সময় মুক্তিযোদ্ধা আলকাছ (ভৈরব) ঘটনাস্থলে শহীদ হন। গুলিতে ব্যাংকের একজন ক্যাশিয়ার ও একজন দারোয়ানও মৃত্যুবরণ করে।
১৬ই অক্টোবর হালিমপুরের উত্তরে বগামারা রেলব্রিজে নিকলী উপজেলার মোজাম্মেল হক আবীরের গ্রুপ, গুরুই গ্রামের মহিউদ্দিনের গ্রুপ ও বসুর গ্রুপ যৌথভাবে আক্রমণ চালালে ২০ জন রাজাকার প্রাণ হারায়। বগামারা রেলব্রিজ আক্রমণ-এ ব্রিজটি ধ্বংস হয়। এখান থেকে ১১টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
বগামারা রেলব্রিজ আক্রমণকারী মুক্তিযোদ্ধারা মানিকখালী-সরারচর স্টেশনের মধ্যবর্তী মণ্ডলভোগ রেলব্রিজে আক্রমণ করেন। মণ্ডলভোগ রেলব্রিজ আক্রমণ-এ অন্তত ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। এখান থেকে ২৫টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
শত্রুবাহিনীর হাতে মোতালিবের মৃত্যু মুক্তিযোদ্ধারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। ২৬শে অক্টোবর বাজিতপুর থানা আক্রমণ-এর পরিকল্পনা করা হয়। ২৭শে অক্টোবর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুরের আশেপাশে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেন। সাধারণ জনতাও ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় রাস্তায় নেমে আসে। জনতা স্লোগানের পর স্লোগানে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তোলে। বিস্ফোরক দিয়ে জুমাপুরের ব্রিজ ভেঙে দেয়া হয় যাতে সরারচর থেকে মিলিশিয়া বাহিনী বাজিতপুরে ঢুকতে না পারে। কমান্ডার মহিউদ্দিন, ইয়াকুব আলী, বসু ও আরো অনেকের অসীম সাহসিকতার ফলে মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুর থানা আক্রমণে সহজেই বিজয়ী হন। এখানে ৪০-৪৫ জন রাজাকার ধরা পড়ে। স্থানীয় রাজাকারদের অনেকে পালিয়ে যেতে সমক্ষ হয়, কেউ-কেউ নিহত হয়।
২৭শে অক্টোবর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা সরারচর মিলিশিয়া ক্যাম্পের আশেপাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। সকালে একটি লোকাল ট্রেন ভৈরবের উদ্দেশ্যে সরারচর রেলস্টেশনে এসে থামে। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার ইদ্রিস স্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায় ২ ইঞ্চি মর্টারের গোলা দিয়ে ইঞ্জিনের বগিতে আঘাত করেন। এতে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। ভয়ে সরারচরের রাজাকার ও মিলিশিয়ারা ক্যাম্পের বাংকারে নিরাপদ অবস্থান নেয়। শত্রুদের চারদিকে প্রতিরোধ ও ঘেরাও দিনভর চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পরিশ্রান্ত থাকায় রাতে শিবনাথ হাইস্কুলে অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকাররা রেললাইন দিয়ে হেঁটে কিশোরগঞ্জ সদরে চলে যেতে সক্ষম হয়। একজন আহত পাকিস্তানি পুলিশ জনতার হাতে ধরা পড়ে।
২৭শে অক্টোবর বাজিতপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। দুপুরে হাজার-হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর পরিবেশে বাজিতপুরে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- হারুন-উর রশীদ, বীর প্রতীক (পিতা সুলতান ভূঁইয়া, ঘাঘুটিয়া)।
বাজিতপুরের যেসব মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, তাঁরা হলেন- মো. হোসেন আলী (পিতা মো. ওয়াছ মিয়া, পৈলানপুর; প্রাক্তন সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষক; বাজিতপুর থেকে ধরে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়), স্বরাজ মিয়া (পিতা হোসেন আলী, পৈলানপুর; মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে পিতাকে সহযোগিতা করতেন; পিতার সঙ্গে পুত্রকেও ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়), সিদ্দিকুর রহমান (পিতা হাজী আব্দুস ছাত্তার, পাথারিয়াকান্দি; ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে আসার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকবাহিনীর এম্বুশে পড়েন এবং তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর পাওয়া যায়নি), আব্দুল মোতালিব (পিতা আব্দুল আজিজ, সরিষাপুর;। জুমাপুরের সামনে ছোট কালভার্টের ওপর যুদ্ধের সময় শহীদ), মিজবাহ উদ্দিন আহমেদ (পিতা খুর্শিদ উদ্দিন 5 আহমেদ, জ্ঞানপুর; ৮ই নভেম্বর ছাতিরচর হাওর অঞ্চলে অজ্ঞাত সন্ত্রাসী কর্তৃক শহীদ), জালাল উদ্দিন (পিতা ফালু মিয়া, পিউরী; দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সহযোদ্ধার অসাবধানতায় সরারচর অঞ্চলে শহীদ), জসিম উদ্দিন (পিতা মনু ভূঁইয়া, খাসাল্লা গজারিয়া; কিশোরগঞ্জ ন্যাশনাল সুগারমিল যুদ্ধে শহীদ), উছমান গণি (পিতা আমজাদ আলী, খাসাল্লা গজারিয়া; কিশোরগঞ্জ ন্যাশনাল সুগারমিল যুদ্ধে শহীদ), আনোয়ার হোসেন (পিতা আ. হাসিম, পিরিজপুর; কাটাবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ যুদ্ধে শহীদ), মো. নুরুল ইসলাম (পিতা মো. আলী, হিলচিয়া; কিশোরগঞ্জ ন্যাশনাল সুগারমিল যুদ্ধে শহীদ), ইন্দু ভূষণ দাস (পিতা তারিণী চরণ দাস, চন্দ্রগ্রাম; ১৯শে এপ্রিলের পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন; রাজাকাররা ৪ঠা মে তাঁকে হানাদারদের হাতে তুলে দেয়; অজ্ঞাত স্থানে শহীদ), হেলাল উদ্দিন (সেনা সদস্য, ময়নামতিতে শহীদ), হোছেন আলী মাঝি (পিতা মীর বকস্, দিঘিরপাড়; বাজিতপুর ন্যাশনাল ব্যাংক অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিবাহিনীকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার কারণে ঘটনার ৪-৫ দিন পর তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে দিঘিরপাড় ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয়) এবং মো. সিদ্দিকুর রহমান (মীরেরগাঁও, সরারচর, বাজিতপুর; বাজিতপুর কলেজের ভিপি ছিলেন। তিনি আগরতলা থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ২৮শে অক্টোবর ইসলামপুর সিএন্ডবি রোডে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে আহত অবস্থায় ধৃত হন। এক মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাক হেডকোয়ার্টার্সে পাকসেনারা তাঁকে নিমর্মভাবে নির্যাতন শেষে হত্যা করে)।
মুক্তিযুদ্ধে যাবার পথে যাঁরা শহীদ হন, তাঁরা হলেন- মো. হানিফ (পিতা আ. খালেক, গাজিরচর), মো. নানু মিয়া (পিতা সিরাজ মিয়া, তুলাকান্দি), মো. গিয়াস উদ্দিন (নোয়াপাড়া), সাইফুল ইসলাম (পিতা হাজী নবাব আলী, গাজিরচর) এবং মো. জজ মিয়া (পিতা হাজী আ. রহিম, গাজিরচর)।
শহীদ হেলালের নামে বসন্তপুরে শহীদ হেলাল প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বসন্তপুরে একটি সড়কের নাম রাখা হয়েছে শহীদ লেফটেনেন্ট এ কে এম ফারুক সড়ক। [মো সিরাজল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!