You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঘাউড়া-সেমন্তঘর গণহত্যা (নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

বাঘাউড়া-সেমন্তঘর গণহত্যা (নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ১লা নভেম্বর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ২২ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। ১লা নভেম্বর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বাঘাউড়া গ্রামের পাশে বাইখালী খালে হানাদার বাহিনীর একটি দল লঞ্চযোগে আসে। গ্রামকে রক্ষা করার জন্য গ্রামের ১০-১২ জন স্বাধীনতাবিরোধী ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে হানাদার বাহিনীকে স্বাগত জানায়। হানাদার বাহিনীর ভয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ বাড়ির পুকুরপাড়, ঝোপঝাড় ও বিভিন্ন স্থানে পালাতে থাকেন। পার্শ্ববর্তী নারায়ণপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার জোয়াদ আলী গুলি করে মানুষজন মারতে থাকে ও গ্রামের বাড়িঘরে লুণ্ঠন শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ১৬ জন লোককে ধরে নয়াপুকুর পাড়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এর মধ্যে ২ জন উপস্থিত বুদ্ধির জোরে বেঁচে যান। হানাদারদের দেয়া আগুনে ২ জন মানুষ পুড়ে নিহত হন। গণহত্যার পর গ্রামের লোকজন লাশগুলো গ্রামের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে গণকবরে সমাহিত করে।
একই দিন হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী সেমন্তঘর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আছে এবং গ্রামবাসী তাদের খাওয়া- দাওয়া দিচ্ছে ও অন্যান্য সহযোগিতা করছে এ সংবাদের ভিত্তিতে সেমন্তঘর গ্রামে অভিযান চালায়। তারা গ্রামের পূর্ব মাঠে কর্মরত অবস্থায় ২ জন কৃষককে হত্যা করে। এছাড়া ২৮শে সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উজানিসা ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে আহরন্দ ব্রিজের নিকট নৌকাভর্তি প্রায় শতাধিক শরণার্থীর বড় একটি নৌকা হানাদার বাহিনী আটক করে। এসব শরণার্থী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে যাচ্ছিল। এ নৌকায় সেমন্তঘর গ্রামের ৩ জন শরণার্থী ছিল, যাদের তারা হত্যা করে।
বাঘাউড়া-সেমন্তঘর গণহত্যায় শহীদ ২২ জন গ্রামবাসী হলেন- বাঘাউরা গ্রামের আলফু মোল্লা (৬০) (পিতা কিতাব আলী মোল্লা), লাল মিয়া (৪০) (পিতা জমির উদ্দিন), মালু মিয়া (৭০) (পিতা জিন্নাত আলী), নায়েব আলী (৭৫) (পিতা আমিন উদ্দিন), সহিদ মিয়া (৩২) (পিতা কফিল উদ্দিন), মনিচান (৫৫) (পিতা ছায়েব আলী), লাল মিয়া (৭০) (পিতা মিন্নত আলী), আব্দুল খালেক (৫৫), লালু বৈরাগী (৫৫), মাজেক মিয়া (৬৫) (পিতা সেকেন্দার মুন্সী), আ. খালেক (৩০) (পিতা আলী হোসেন), আ. লতিফ (৩৫) (পিতা সোনা মিয়া ভূঁইয়া), আফিন নেছা (৭৫), বুরজত আলী (৮৫) (পিতা গোলজার আলী), মুলুক হোসেন (৮৫) (পিতা আইন উদ্দিন), হুরণ আলী (৬০) (পিতা মোরালী), পাচু মিয়া (৬০), মোতাহার (৩৫) (পিতা দুদু মিয়া), পানাউল্লাহ (৯০), সেমন্তঘর গ্রামের তারিণী পাল (৪০) (পিতা মহেন্দ্ৰ পাল), সুনীল ঘোষ (৪০) (পিতা নন্দ ঘোষ) ও গোপাল পাল (৩৫)। [মো. শাহজাহান সোহেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!