You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঘইল পশ্চিমপাড়া গণহত্যা (ঈশ্বরদী, পাবনা)

বাঘইল পশ্চিমপাড়া গণহত্যা (ঈশ্বরদী, পাবনা) সংঘটিত হয় ২৩শে এপ্রিল। এতে ৫০ জন নারী- পুরুষ শহীদ হন।
পাকসেনারা ১১ই এপ্রিল ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করে। তাদের সহযোগিতায় অবাঙালিরা সমস্ত ঈশ্বরদীকে নরকে পরিণত করে। এর পূর্বে স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে ১০ই এপ্রিল ইশ্বরদী থানাধীন পাকশীর মুসলিম স্কুলে অবাঙালিরা হত্যার স্বীকার হয়। পাকসেনারা যখন ঈশ্বরদীতে ঘাঁটি গেড়ে বসে, তখন অবাঙালিরা তাদের হত্যাকাণ্ডের দোসর হয়ে ওঠে ফলে তাদের প্ররোচনা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকবাহিনী পাকশীর নিকটবর্তী বাঘইল গ্রামে গণহত্যা চালায়।
ঈশ্বরদীর পাকশীতে ছিল পাকসেনাদের বড় ঘাঁটি। এ ঘাঁটির পূর্ব পাশেই বাঘইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ার অবস্থান। ২৩শে এপ্রিল দুপুর বেলা পাক হানাদাররা এ গ্রামে গণহত্যায় মেতে ওঠে। পুরুষ মানুষরা মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিল। স্ত্রীলোকেরা দুপুরের রান্নায় ব্যস্ত ছিল। পাকবাহিনী পশ্চিমপাড়ায় ঢুকেই নারী, পুরুষ, শিশু যাকে সমানে পায় তাকেই ধরে নিয়ে আব্দুল কাদের প্রামাণিকের বাড়ির উঠানে জড়ো করে এবং লাইনে দাঁড় করায়। তারপর তাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। সঙ্গে-সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ৫০ জন নারী-পুরুষের নিথর দেহ। তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন— মো. মজিবর রহমান খান, মো. আরমান আলী প্রমাণিক, মো. আবুল হোসেন, মো. মোসলেম হোসেন, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. উমেদ আলী, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. বাদাম মণ্ডল, মো. আয়ুব আলী, মো. সবুর খান, মো. আজিবর রহমান, মো. আবু সায়েদ, মোছা. সাকাতুন, রূপজান খাতুন, মোছা. দাসিমন, হাওয়া বেগম, মনোয়ারা বেগম, রহিমা খাতুন, মোছা. সাজেদা, মোছা. নুরুন্নাহার এবং মোছা. জ্যোৎস্না। ঘটনাক্রমে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও দুজন প্রাণে বেঁচে যান। তাদের একজন আব্দুল কাদের, অন্যজন মরিয়ম খাতুন (পিতা মফিজ উদ্দিন)। মরিয়ম খাতুন আজো নিহতদের কথা অশ্রুসজল চোখে স্মরণ করেন। তিনি কোমরে গুলি লেগে মারাত্মক আহত হন। দিনশেষে লাশের স্তূপ থেকে বের হয়ে কোনো প্রকার পাকুড়িয়া গ্রামে তার বোনের বাড়িতে চলে যান। কালের স্বাক্ষী হয়ে তিনি আজো বেঁচে আছেন। বাঘইল পশ্চিমপাড়া এখন শহীদপাড়া নামে পরিচিত। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!