বাখরাবাদ গণহত্যা (মুরাদনগর, কুমিল্লা)
বাখরাবাদ গণহত্যা (মুরাদনগর, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। এতে ১৪৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারায়। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নে উত্তর বাখরাবাদ ও দক্ষিণ বাখরাবাদ নামে দুটি গ্রাম অবস্থিত। এ জেলা এবং উপজেলার ইতিহাসে ২৪শে মে একটি কালো দিন। ১৯৭১ সালের এদিনে পাকহানাদার বাহিনী তাদের এ-দেশীয় দোসর -রাজাকার- আলবদরদের সহযোগিতায় উত্তর বাখরাবাদ ও দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামে প্রবেশ করে ঘুমন্ত গ্রামবাসীদের ওপর পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চালায়। এ হত্যাকাণ্ড চলে ভোররাত থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এদিন পাকসেনারা বর্বরোচিত তাণ্ডব চালিয়ে ১৪৭ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। ঐ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামের বিভিন্ন স্থানে লাশগুলো পড়ে থাকে। পাক হায়েনারা ঐদিন দুটি গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারীদের ধর্ষণ করে। তারা মন্দিরে উপসনারত এক হিন্দু নারীকেও ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ওই নারীর স্তন কেটে এরপর গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর শহীদদের অধিকাংশকেই তাদের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী গণকবর দেয়। উত্তর ও দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে উপজেলাবাসী ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে।
পাকহানাদার বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৩ জন যুবককে পার্শ্ববর্তী উপজেলা দেবীদ্বার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাদের মধ্য থেকে ১৯ জনকে দিয়ে বিশাল এক গর্ত খোঁড়ায়। তারপর ব্রাশ ফায়ারে তাদের হত্যা করে ঐ গর্তে গণকবর দেয়। পথিমধ্যে পাকসেনারা ২ জন কিশোরকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু একজন কিশোর বাঁচার লক্ষ্যে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গেলে পাকসেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ-সময় বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্র চন্দ্র সাহার ছেলে হরেকৃষ্ণ সাহা নামে এক কিশোর (দশম শ্রেণির ছাত্র, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসারত) ঘটনাক্রমে বেঁচে যায়। [নাহিদ মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড