You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাখাই-মধ্যনগর যুদ্ধ (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)

বাখাই-মধ্যনগর যুদ্ধ (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ৬-৮ই ডিসেম্বর। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে প্রায় ২ শত পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে মিত্রবাহিনী-র ২৫ জন সদস্য শহীদ হন। যুদ্ধকালে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হন। এ-যুদ্ধে পাকসেনারা পরাজিত হলে ফুলপুর থানা হানাদারমুক্ত হয়।
ফুলপুরের সরচাপুর গোদারাঘাটে পাকবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘাঁটি লক্ষ করে কংস নদীর পারঘেঁষা বাখাই-মধ্যনগর ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে জড়ো হতে থাকেন। রাজাকারদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের এ সমাবেশের সংবাদ পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারা সরচাপুর, ঠাকুরবাখাই, পশ্চিম বাখাই, পূর্ব বাখাই, নাকাগাঁও, আলোকদী, ফতেপুর ইত্যাদি গ্রামে অবস্থান নেয়। ৬ই ডিসেম্বর বাখাই-মধ্যনগরে পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধারা মুখোমুখি অবস্থানে এলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি বাহিনী মর্টারসহ বিভিন্ন ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। তাদের নিক্ষিপ্ত শেলের আঘাতে সরচাপুর গ্রামের বেশকয়েক জন নিরীহ মানুষ মারা যান। এ-যুদ্ধ ৩ দিন ধরে চলে।
যুদ্ধের শেষদিন অর্থাৎ ৮ই ডিসেম্বর একদল পাকিস্তানি সৈন্য সরচাপুরঘাট থেকে ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে মধ্যনগর গ্রামের রাস্তায় ওঠে। সেখান থেকে তারা বাখাই গ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বাখাই গ্রামের আকিকুল ইসলামের বাড়ির কাছে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি টহল ছিল। ঘন কুয়াশার কারণে এ দলের মুক্তিযোদ্ধারা দূর থেকে পাকসেনাদের দেখতে পাননি। ফলে এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ নিজেদের খুব কাছাকাছি চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে পাকসেনারা গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে প্রচণ্ড সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম (পিতা ইয়াদ আলী মণ্ডল, গ্রাম স্বল্প, থানা তারাকান্দা) ৮- ১০ জন সঙ্গী নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। তাঁরা জীবন বাজি রেখে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক সময় আবুল কাসেম অন্য সাহযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেন। তাঁর এলএমজি-র গুলিতে ৭০- ৮০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। বাকিরা পালাতে থাকে। এ-অবস্থায় আবুল কাসেমের গুলি শেষ হয়ে যায়। হানাদাররা তা বুঝে ফেলে। শত্রুদের গুলিতে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি শহীদ হন। কিছুক্ষণের মধ্যে পাকবাহিনীর যুদ্ধ বিমান এসে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এ-যুদ্ধে মিত্রবাহিনী-র ২৫ জন বীরসেনা শহীদ হন। অপরদিকে তিনদিনে পাকিস্তানিদের প্রায় ২শ সৈন্য মারা যায়। যুদ্ধে হতাহত পাকিস্তানিদের ট্রাকে করে ময়মনসিংহে নেয়া হয়। এ-যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৮ই ডিসেম্বর ফুলপুর থানা হানাদারমুক্ত হয়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!