বাগধানী ব্রিজ অপারেশন (তানোর, রাজশাহী)
বাগধানী ব্রিজ অপারেশন (তানোর, রাজশাহী) পরিচালিত হয় ১৮ ও ১৯শে নভেম্বর। এতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত এবং ব্রিজটি ধ্বংস হয়।
রাজশাহী শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে তানোর ও গোদাগাড়ীর সংযোগস্থলে বাগধানী ব্রিজটি অবস্থিত। রাজশাহীর সঙ্গে তানোর, মোহনপুর ও গোদাগাড়ীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্রিজটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ কারণে মোহনপুর উপজেলার মুকছেদ (মহব্বতপুর), নিয়ামত (মহব্বতপুর), মোজাহার (মহব্বতপুর), আফছার (মহব্বতপুর), মুনসুর (মহব্বতপুর), ময়েজ (মহব্বতপুর), বাক্কার আলী (মহব্বতপুর) প্রমুখ রাজাকার ব্রিজটিতে সবসময় পাহারা দিত।
১৮ই নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সফিকুর রহমান রাজা এবং হারুন-অর-রশীদের নেতৃত্বে মো. নজরুল ইসলাম খোকা (সাবেক জেলা কমান্ডার, রাজশাহী), মো. হারুন, মো. আব্দুর রহমান (হাডুপুর, পবা), শাহজালাল খান পল্টু (আলুপট্টি, রাজশাহী), মুকুল (বুলনপুর, রাজশাহী), হানিফ (রাজপাড়া, রাজশাহী), মকবুল (বারইপাড়া, বায়া, রাজশাহী), মো. তৈয়বুর রহমান (উজানপাড়া, গোদাগাড়ী, রাজশাহী), লায়েব আলী (বাড়লপাড়া, রাজশাহী), স্বপন (নাটোর), বদ্ধিনাথ (আদ্যাড়াপাড়া, গোদাগাড়ী, রাজশাহী), সৈয়দ আলী (সরমুংলা, শিতলাই, পবা), সুশীল (নারায়ণপুর, গোদাগাড়ী, রাজশাহী), বিশ্বনাথ টুডু (সাগুনা, গোদাগাড়ী, রাজশাহী), মো. আমির আলী (আমনুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা বাগধানী ব্রিজ আক্রমণ করেন। তাঁরা সেখানে গিয়ে মাইন বসিয়ে পাকসেনাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে পাকসেনারা সেদিকে এলে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দিকে পজিশন নেন। পাকসেনারা এসেই সার্চ লাইট ব্যবহার করে অভিযান শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে থাকেন। এর মধ্যেই উভয় পক্ষে কিছুক্ষণ গুলি বিনিময় হয়। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হলে অবশিষ্ট পাকসেনারা আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করেন। পরদিন ১৯শে নভেম্বর রাত ৪টার দিকে সফিকুর রহমান রাজা এবং মো. হারুন-অর-রশীদের নেতৃত্বে মো. ফজলুল হক, মো. এরশাদ আলী সরকার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে পুনরায় ব্রিজটি আক্রমণ করেন। তাঁরা ব্রিজটিতে মাইন বসান। ঐদিন রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে রাজাকাররা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা মাইনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্রিজটিকে ধ্বংস করে দেন। এর ফলে ঐ এলাকায় পাকবাহিনীর চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। [আখতারুজ্জাহান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড