You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলা চারু ও কারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদ

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১২ই মার্চ অসহযোগ আন্দোলন- চলাকালে ঢাকায় আর্টস কাউন্সিল গ্যালারিতে চারু ও কারু শিল্পীদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি চারুকলা কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ শফিকুল হোসেন এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় শহীদ পরিবারবর্গের সাহায্যার্থে একটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয় এবং চারু ও কারু শিল্পীদের একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নির্বাচিত হন শিল্পী মুর্তজা বশীর ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন— শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, কাজী আবদুল বাসেত প্রমুখ। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল- ১.বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ‘প্রতীক’কে জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সংগ্রামী মনকে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করা; ২. দেশাত্মবোধক সংগ্রামী স্কেচ ছাপিয়ে বা সাইক্লোস্টাইল করে সভা-মিছিলে বিতরণ করা; ৩. আন্দোলনমুখী পোস্টার ও ফেস্টুন প্রচার ও এ নিয়ে মিছিলের আয়োজন প্রভৃতি।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ই মার্চ বাংলা চারু ও কারু শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ ‘স্বা ধী ন তা’ শীর্ষক এক মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলের অগ্রভাগে স্বা ধী ন তা কথাটির চারটি অক্ষরকে চারটি কুলায় বড়-বড় করে লিখে ফেস্টুন আকারে বহন করা হয়। সরকারবিরোধী ব্যানার, কার্টুন ও ফেস্টুনে সজ্জিত চারু ও কারু শিল্পীদের এ মিছিল কেন্দ্ৰীয় শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের কয়েকটি কার্টুন ও ফেস্টুনের ভাষা ছিল নিম্নরূপ-
‘শোষণমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম কর’; ‘তোমার ওখানে মরুতে ফসল এল, শুধু অনাহারে কেটেছে আমার দিন’; ‘বিদ্রোহ চারিদিকে বিপ্লব আজ’; ‘তল্পী এবার গুটাও ভাই, বাঁদর নাচ ক্ষান্ত দাও’ প্রভৃতি।
একেবারে অগ্রভাগে থেকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিল কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বেগম সুফিয়া কামাল মিছিলে যোগ দেন। মিছিল শেষে বাহাদুর শাহ পার্কে সমবেত শিল্পী ও জনতার উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় জয়নুল বলেন, “শিল্পীর তুলি অত্যাচারীর বন্দুকের চাইতেও বেশি শক্তিশালী। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পীদের যে নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে, সে ব্যাপারে সবদিকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিত্রকলার মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সুন্দরভাবে হতে পারে। স্বাধিকার সংগ্রামকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য শিল্পীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, এর দুদিন আগে ১৪ই মার্চ এক বিবৃতির মাধ্যমে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সরকারের গণবিরোধী ভূমিকার প্রতিবাদে তাঁকে দেয়া “হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ পদক প্রত্যাখ্যান করেন। [সৈয়দ আজিজুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!