You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলা বাজার যুদ্ধ (দৌলতখান, ভোলা)

বাংলা বাজার যুদ্ধ (দৌলতখান, ভোলা) সংঘটিত হয় ২৭শে অক্টোবর কমান্ডার আলী আকবর বড়ভাই, হাবিলদার কাঞ্চন মিয়া, হযরত আলী, সুবেদার ফিরোজ মিয়া, আবদুল আজিজ, নকশাল ছিদ্দিক ও গাজী জয়নালের নেতৃত্বে। এঁদের সহায়তা করেন নুরু হাওলাদার, জয়নাল হাওলাদার, নেজামল হক মিয়া, জেবল মিয়া, হাফেজ মিয়া, মোজাম্মেল মাস্টার, মোশারেফ মাস্টার, কাদের মাস্টার, খবির উদ্দিন পণ্ডিত, আজিজ মাস্টার, মজিবল পাটোয়ারী, মোশারেফ মিয়া প্রমুখ। অপরদিকে পাকবাহিনীর নেতৃত্ব দেয় ক্যাপ্টেন আলতাফ ও সুবেদার সিদ্দিক এবং কুখ্যাত রাজাকার মোহাম্মদ টনি। দৌলতখান উপজেলায় সংঘটিত এ-যুদ্ধে বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ এবং বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
পাকবাহিনীর প্রধান ক্যাম্প ভোলা ওয়াপদা থেকে বাংলা বাজার প্রায় ১১ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। দেশ স্বাধীনের আগে বাংলা বাজারকে টনির হাট বলা হতো। মোহাম্মদ টনি নামে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি বাজারটি বসায় বলে এর নাম হয় টনির হাট। মুক্তিযুদ্ধকালে মোহাম্মদ টনি কুখ্যাত রাজাকারের ভূমিকা পালন করায় তাকে হত্যা করা হয় এবং স্বাধীনতার পরে বাজারের নাম রাখা হয় ‘বাংলা বাজার’। ভোলা থেকে চরফ্যাশন যাওয়ার পাকা সড়কটি বাংলা বাজারের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। বাজারে একটি চৌরাস্তার মোড় রয়েছে। এর উত্তরে ভোলা সদর, দক্ষিণে চরফ্যাশন, পশ্চিমে বাঘমারা এবং পূর্বে দৌলতখান। বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমে মোহাম্মদ টনির বাড়ি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এমএনএ-র বাড়ি বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমে কোড়ালিয়া গ্রামে মহকুমার অন্যান্য থানায় সড়কপথে যেতে হলে এ বাজার হয়েই যেতে হতো। অতএব এ বাজারটি তখন এ অঞ্চলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভোলা সদরের দক্ষিণের প্রায় সকল থানা মুক্ত করার পর কমান্ডার ছিদ্দিক মিয়া ভোলা আক্রমণ করার লক্ষ্যে বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ক্যাম্পে অবস্থান নেন। তিনি অক্টোবর মাসের ৪র্থ সপ্তাহের প্রথমদিকে একটি সভা করে বাংলা বাজারে একটি শক্ত প্রতিরোধ গড়ার কথা ব্যক্ত করেন এবং বিভিন্ন গ্রুপকে অতিসত্বর বাংলা বাজারে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেন। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন হাবিলদার কাঞ্চন মিয়া, হযরত আলী, মো. সিদ্দিকুর রহমান, আচমত মিয়া, মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। ২৪শে অক্টোবর দৌলতখান উপজেলা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী অবগত হন যে, পাকবাহিনী যে-কোনো সময় দৌলতখান আক্রমণ করতে পারে। তাই ২৫শে অক্টোবর তিনি তাঁর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ল্যান্স নায়েক ফারুক বাচ্চু, কাঞ্চন মিয়া, ল্যান্স নায়েক জমির হোসেন, কর্পোরাল ইব্রাহিম মিয়া, আনসার এডজুট্যান্ট আলী আকবর বড়ভাই প্রমুখ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, দক্ষিণের পথ দিয়ে পাকবাহিনীর আগমন রোধের ার হাট এবং বাংলা বাজারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
কমান্ডার ছিদ্দিক মিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপ ২৬শে অক্টোবরের মধ্যে বাংলা বাজারের চারদিকে এসে অবস্থান নেয়। এসব গ্রুপের নেতারা ছিলেন কমান্ডার ছিদ্দিক মিয়া, আচমত মিয়া, ল্যান্স নায়েক মো. সিদ্দিকুর রহমান, হাবিলদার শামসু মিয়া, কাঞ্চন মিয়া, হযরত আলী, জয়নাল গাজী, আলী আকবর বড়ভাই, ইব্রাহিম মিয়া প্রমুখ। এঁরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাজারস্থ মোহাম্মদ টনির ঘরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলেন।
এদিন রাতে চাউলতাতলীর আব্বাস সরদারের বাড়ির স্কুলঘরে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে মো. মোতাহার উদ্দিন এমপিএ, রেজায়ে করিম চৌধুরী এমপিএ, ছিদ্দিক মিয়া, সালেহ আহম্মদ, মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, মো. সিদ্দিকুর রহমান, আলী আকবর বড়ভাই, হাবিলদার আবদুল আজিজ, হাবিলদার শামসুল হক, কর্পোরেল ইব্রাহীম মিয়া, মাহে আলম কুট্টি, আচমত মিয়া, গিয়াসউদ্দিন তালুকদার, কাজী নান্নু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলী আকবর বড়ভাইকে হাইকমান্ড এবং ছিদ্দিক মিয়াকে সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়। হাইকমান্ড ২৭শে অক্টোবর বাংলা বাজারের প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণ করবেন বলে জানান। এরপর হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় একটি পুলের পশ্চিম পাশে খালপাড় ও জব্বার বেপারীর বাগান, রাস্তার পূর্বপাশের সিরাজ মিয়ার বাগান ও বাসার পাশে, রাস্তার পাশে, মাদ্রাসার পেছনে, চৌরাস্তার দক্ষিণ পাশে, বাংলাবাজার-বাঘমারা সড়ক এবং বাংলাবাজার- দৌলতখান সড়কের দক্ষিণ পাশে অনেকগুলো বাংকার খনন করেন। পূর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য যেসব বাংকার খনন করা হয়েছিল, সেগুলোও সংস্কার করা হয়। সব মিলিয়ে শতাধিক বাংকার প্রস্তুত করা হয়। প্রত্যেক বাংকারে ২-৩ জনকে পালাক্রমে পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়। বাজারের দক্ষিণে হযরত আলীর গ্রুপ, পশ্চিমে ল্যান্স নায়েক মো. সিদ্দিকুর রহমানের গ্রুপ এবং পূর্বদিকে হাবিলদার কাঞ্চন মিয়ার গ্রুপ অবস্থান নেয়। রাতে পুলের পূর্বপাড়ে অবস্থান নেয় ফিরোজ মিয়ার গ্রুপ।
আলী আকবর বড়ভাইয়ের নির্দেশে ঐ রাতেই ল্যান্স নায়েক মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়। ২৭শে অক্টোবর নতুন করে প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এবং নতুন কমান্ডারের নির্দেশনার কারণে বাংলা বাজারে ইতঃপূর্বে যে প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছিল তার রদবদল হয়। পাকবাহিনীর আক্রমণের সম্ভাবনা না থাকায় বাজারের পাহারাও তেমন জোরদার করা হয়নি। অনেক মুক্তিযোদ্ধা বাজারের বিভিন্ন বাসায় ও বাজারের নিকটবর্তী বাড়িসমূহে রাত্রিযাপন করতে যান।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের এই অবস্থানের খবর রাজাকারদের মাধ্যমে পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে যায়। তাই ২৭শে অক্টোবর ভোররাতে বাংলা বাজারের ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বাঘমারা লঞ্চঘাট হয়ে পাকবাহিনীর ৭০-৭৫ জন সদস্য রাজাকার মোহাম্মদ টনি, নায়েক শামসুল হক ও মকবুল কমান্ডারের নেতৃত্বে দুটি দলে ভাগ হয়ে অতর্কিতে বাংলা বাজারে প্রবেশ করে। রোজার মাস হওয়ায় অনেকেই তখন সেহেরি খেয়ে শুয়ে পড়েছিলেন। কেউ-কেউ ফজরের নামাজের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। বাজারের পশ্চিম পাশে এসে পাকবাহিনীর প্রথম গ্রুপটি রাজাকার মোহাম্মদ টনি, নায়েক শামসুল হক ও মকবুল কমান্ডারের নেতৃত্বে সরাসরি বিভিন্ন বাংকারের কাছে গিয়ে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে মারতে থাকে। দ্বিতীয় দলটি বাজারের পশ্চিম পার্শ্বস্থ ল্যান্স নায়েক মো. সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে ও পার্শ্ববর্তী হাসান ডাক্তারের বাড়িতে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করে এবং হত্যাকাণ্ড চালায়। ঐ এলাকার লোকজন উত্তর দিকে পালাতে থাকলে তাদের ধাওয়া করে খালপাড়স্থ আবদুল জব্বার বেপারীর বাড়িতে গিয়ে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা এলাকার সেকান্দর, বারেক, আবুল হোসেন ডাক্তার, আবদুল জব্বার, মুনাফ ও আবদুল হককে হত্যা করে বাজারস্থ তাদের প্রথম দলের সঙ্গে যুক্ত হয়। বাজারে প্রবেশ করে তারা অধিকাংশ ঘরে অগ্নিসংযোগ করে এবং বাজারের শামসুল হক শরীফ, জয়গোপাল কর্মকার, রহিম আলী, শাকিরা খাতুনসহ অনেককে গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনীর প্রথম দলটি বাজারে প্রবেশ করে হত্যাকাণ্ড চালানোর সময় দক্ষিণ ও পূর্বদিকের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা সংঘবদ্ধ না থাকায় পাকবাহিনীর আক্রমণে তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হন। বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধরাও নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে থাকেন। এ অবস্থায় হাবিলদার কাঞ্চন মিয়া চাউলতাতলী এলাকায় গিয়ে সকলকে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেখানে গিয়ে একত্রিত হন। এক গ্রুপ ঘুইঙ্গার হাটে গিয়ে ফারুক বাচ্চুর সঙ্গে যুক্ত হয়। অপর একটি গ্রুপ খায়ের হাটের রাস্তার মাথায় শামসু মাতব্বরেরর বাড়ির কাছে অবস্থান নেয়। এ গ্রুপে ছিলেন সুবেদার সালামউদ্দিন ছিদ্দিক, হাবিলদার হানিফ, শামসু, আজিজ, শামসুদ্দিন, তোফাজ্জল করিম, মিন্টু মিয়া, আবদুল মালেক প্রমুখ। স্থানীয় লোকজন কর্তৃক তাঁদের আপ্যায়নের পর তাঁরা রাস্তা থেকে ১৫০ গজ পূর্বদিকের একটি বাগানের ভেতরে অবস্থান নেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের খায়ের হাটের রাস্তার মাথায় সমবেত হওয়ার খবর রাজাকার টনি পাকবাহিনীকে জানিয়ে দেয়। অতঃপর পাকবাহিনীর একটি দল সকাল ১০-১১টার দিকে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে খায়ের হাটের রাস্তার মাথায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি করে দ্রুত পিছু হটতে থাকেন। পাকবাহিনীর গুলিতে আনসার সদস্য মিন্টু ও পুলিশ সদস্য তোফাজ্জল আহত হয়ে পিছু হটতে না পারায় পাকবাহিনী তাঁদের ধরে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করে বাংলা বাজারে ফিরে যায়। সেখানে তারা বেলা প্রায় ২টা পর্যন্ত ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও লুটতরাজ চালায়। রাজাকার মোহাম্মদ টনির নেতৃত্বে যে-সমস্ত দোকান ও বাসাবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিধুভূষণ কর্মকার, বিনোদ কর্মকার, প্রাণ গোপাল পোদ্দার, অবনী মোহন, জেবল হক মিয়া ও কালীপদ কর্মকারের ঘর। অতঃপর রাজাকার টনি তাদের পথ দেখিয়ে দৌলতখানের দিকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা রাস্তার পাশের দোকান ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে এবং এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণ করে। বাংলা বাজার আক্রমণের খবর পেয়ে এসব বাড়িঘরের লোকজন আগেই নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে গিয়েছিল।
বাংলা বাজার যুদ্ধে অংশ নেয়া অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন স্থানীয়। তাঁদের সঙ্গে বরিশাল, ফরিদপুর ও নোয়াখালী জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাও অংশ নিয়েছিলেন। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজয় ঘটে। এতে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২০-২৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন এবং ১০-১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ৩৩টি রাইফেল খোয়া যায়।
পাকবাহিনী বাংলা বাজার ত্যাগ করার পর স্থানীয়রা লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেয়। তারা বাংলা বাজার মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের বাগানে ৪-৫ জন, সিরাজ মিয়ার বাগানে ৩-৪ জন এবং বাংকারে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ মাটিচাপা দেয়। বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের পাশের বাগানে সেকান্দর, বারেক, আবুল হোসেন ডাক্তার ও সৈয়দ ডাক্তারের লাশ দাফন করা হয়। জব্বার বেপারীর বাড়িতে শহীদ আবদুল জব্বার, মো. মোনাফ ও আব্দুল হকের লাশ তাঁদের আত্মীয়রা নিয়ে দাফন করে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক, মোতাহার, আবি আবদুল্লাহ, হানিফ, তোফাজ্জল ও অজিউল্লাহর লাশ বোরহানউদ্দিন নিয়ে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধারা দাফন করেন। বাজারের কাছাকাছি এলাকার শহীদদের লাশও তাঁদের আত্মীয়রা নিয়ে দাফন করে। কিছুকিছু লাশ শেয়াল-কুকুরে খেয়ে ফেলে এবং খাল দিয়ে ভেসে যায়। [মো. রফিকুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!