বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল (মতিনগর)
বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল (মতিনগর) মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ২নং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর হেড কোয়ার্টার্স মেলাঘরের (ত্রিপুরা) নিকটবর্তী মতিনগরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অনেকেই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করতেন। খালেদ মোশাররফ এটি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। তখন তাঁর দলে ক্যাপ্টেন আখতার আহমেদ (পরবর্তীতে মেজর ও বীর প্রতীক) নামে সেনাবাহিনীর একজন চিকিৎসক ছিলেন। তাঁকে কেন্দ্র করে হাসপাতালটি গড়ে ওঠে। ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম, বীর প্রতীক, ডা. নাজিমউদ্দিন, বেগম সুফিয়া কামালের দুই কন্যা সুলতানা কামাল ও সাইদা কামাল, ইডেন কলেজের শিক্ষক জাকিয়া, মিসেস হামিদুল্লাহ, মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ডালিয়া, আসমা আলম, রেশমা আলম, পদ্মা রহমান, নীলিমা বৈদ্য, মিনু বিল্লাহ, সবিতা, শামসুদ্দীন প্রমুখ টিমে যোগ দেন। শুরুতে ঔষধপত্র বা অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামাদি বলতে কিছুই ছিল না। জুন মাসে লন্ডন থেকে নবগঠিত বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)-র সাধারণ সম্পাদক ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী (পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা) ও ডা. এম এ মবিন এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৩০ হাজার টাকা মঞ্জুর করেন। এরপর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একটু পেছনে বিশ্রামগঞ্জে পাহাড়ের ওপর বাঁশ, কাঠ ও শন দিয়ে ২০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হয়। ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ও ডা. এম এ মবিন লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় হাসপাতালের জন্য অর্থ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। আরো কিছু তরুণ ছেলেমেয়ে এসে এখানে যোগ দেয়। ক্রমান্বয়ে হাসপাতালটি প্রায় পূর্ণরূপে গড়ে ওঠে। এটি প্রতিষ্ঠার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অনেকটা বৃদ্ধি পায়। ৯ মাসের যুদ্ধকালে বহু আহত মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। বাংলাদেশ সরকার-এর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ- ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের সময় হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে এ হাসপাতালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্রঃ খালেদ মোশাররফ, মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স, প্রথমা ২০১৩, পৃ. ৪৭-৫০; চৌধুরী শহীদ কাদের, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিকিৎসা সহায়তা, সময় প্রকাশন ২০১৯, পৃ. ১০৩-১১৩
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড