You dont have javascript enabled! Please enable it!

বহলা গণহত্যা (বিরল, দিনাজপুর)

বহলা গণহত্যা (বিরল, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১৩ই ডিসেম্বর। দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় সংঘটিত এ গণহত্যায় ৩৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
বিরল উপজেলাটি সীমান্তবর্তী। দিনাজপুর শহরসংলগ্ন পুনর্ভবা নদীর পশ্চিম পাড়ে এর অবস্থান। শহরের সন্নিকটে হওয়ায় যুদ্ধের প্রথম দিকেই এখানকার লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থির উন্নতি হলে অনেকে ফিরে আসে। পুনরায় ফিরে আসা লোকজনদের সবাই ছিল মুসলমান। ফলে এখানকার গণহত্যার শিকার হয় শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন।
বহলার সাঁতাহারে পাকবাহিনীর দুটি বাংকার ছিল— একটি রেল লাইনের ধারে, অপরটি সাঁতাহার জামে মসজিদের পাশে। কাঞ্চন রেলওয়ে জংশনের নিকটবর্তী মহিউদ্দিন রাইস মিলে এবং মিলের দক্ষিণ পাশের একটি দিঘির ধারে ছিল পাকবাহিনীর ক্যাম্প। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ক্যাম্পদুটি বাঙালি নির্যাতনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২৮শে মার্চ বাঙালি সৈন্যরা দিনাজপুর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স দখল করে নেন। এ-সময় পাকবাহিনীর সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের সময় হাজার- হাজার সাধারণ মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। বহলার লোকজনও ইপিআর বাহিনীকে খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করে। এসব কারণে বহলাবাসী পাকবাহিনী, -রাজাকার ও -আলবদর বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়। ১৩ই ডিসেম্বর বিরলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এক প্রচণ্ড লড়াই হয়। তাতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে না পেরে পাকসেনারা পিছু হটতে থাকে। তখন তারা কাঞ্চন রেলওয়ে জংশনের পূর্ব-দক্ষিণে বহলা গ্রামে বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়। গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে এনে একত্র জড়ো করে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ৩৭ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। এর দুদিন পর মো. শফিউদ্দিন, মো. আফজাল হোসেন, কালু মোহাম্মদ, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ এলাকাবাসী ঘটনাস্থলের পাশে একটি বড় গর্ত খুঁড়ে মৃতদেহগুলো মাটিচাপা দেয়। তসিরউদ্দিন, গোলাম মইনউদ্দিন মনু ও মহসীন আলীর লাশ তাদের বাড়ির পাশে দাফন করা হয়েছে।
বহলা গণহত্যা শহীদরা হলেন: মো. শাহাবুদ্দীন (পিতা খেতু মোহাম্মদ), মো. খমির উদ্দীন (পিতা খেতু মোহাম্মদ), মো. আব্দুল ওহাব (পিতা খেতু মোহাম্মদ), মো. মোসলেউদ্দীন (পিতা তারি মোহাম্মদ), মো. সফিউদ্দীন (পিতা আছির উদ্দীন), আব্দুস সাত্তার, মো. ইব্রাহিম, আব্দুল মজিদ, মো. আবদুর রহমান (পিতা আছির উদ্দীন), মো. ভুতা মোহাম্মদ, মো. কালু মোহাম্মদ (পিতা আমির মোহাম্মদ), মো. জাহের (পিতা ভদো মোহাম্মদ), মো. আখি, মো. টাকরু (পিতা আখি মোহাম্মদ), তসিরউদ্দিন (পিতা মিঞা বক্স মোল্লা), মো. নুরু মোহাম্মদ (পিতা তমির মোহাম্মদ), মো. সামির (পিতা আছির মোহাম্মদ), মো. আব্দুল লতিফ (পিতা কেতাব মোহাম্মদ), মো. ছপি মোহাম্মদ (পিতা চেনা মোল্লা), মো. রবিতুল্লাহ (পিতা জামাল মোহাম্মদ), মো. আকবর আলী (পিতা মো. খলিলউদ্দিন), মো. আমিন আলী (পিতা মো. খলিলউদ্দীন), মো. মুন্সী আব্দুল জব্বার, মো. ইছাহাক আলী (পিতা আব্দুল মোহাম্মদ), চেন্দেরু মোহাম্মদ, আবুল হোসেন, মো. জয়নাল আবেদীন (পিতা আব্দুল মোহাম্মদ), মো. বাকের মোহাম্মদ, মো. রহিমউদ্দীন (পিতা আ. বাকের), মো. গোলাম মোস্তফা (পিতা রহিমউদ্দীন), মো. আ. করিম (পিতাআজির মোহাম্মদ), মো. সোহরাব আলী, গোলাম মইনউদ্দিন মনু (পিতা মফিজ পণ্ডিত), মো. মহসীন আলী (পিতা খাজিরউদ্দীন মোল্লা), মো. উমর আলী (পিতা মছো মোহাম্মদ), আজিলউদ্দীন মুন্সী ওরফে ফকির বুড়া এবং ছামিরউদ্দীন (পিতা হাজিরউদ্দীন)।
বহলার যে জায়গাটিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তার মালিক ছিলেন বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের পিতা মো. খলিলউদ্দিন তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র মো. আকবর আলী ও মো. আমিন আলী গণহত্যায় শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর মো. খলিলউদ্দিন ঐ জায়গাটি গণসমাধির জন্য ছেড়ে দেন। স্থানটি প্রাচীর বেস্টিত রয়েছে। বহলা গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে সরকারি উদ্যোগে ঐ স্থান সংলগ্ন একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। [এম এ কাফি সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!