বাইন্যাপাড়া গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম)
বাইন্যাপাড়া গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২৬শে অক্টোবর রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনী দ্বারা। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের অন্তর্গত এ পাড়াটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে উত্তর হাইদগাঁও এলাকার মুসলিম লীগ নেতা আবদুর রশিদ (পিতা তোড়াইয়া) পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে দালালিতে মেতে ওঠে এবং হাইদগাঁও ইউনিয়ন শান্তি কমিটির নেতা হওয়ার পর সে নানা অপকর্ম শুরু করে। তার নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী কেলিশহর ইউনিয়নের বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এক পর্যায়ে সে ভয়ানক নারীলিপ্সু হয়ে ওঠে এবং উক্ত হিন্দু বাড়িসমূহ থেকে নারীদের নিজের বাড়িতে ধরে এনে ধর্ষণ করতে থাকে। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা অক্টোবর মাসে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২৫শে অক্টোবর রাতে লাঠি আলমের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা তার বাড়িতে অপারেশন চালিয়ে সেখানেই তাকে হত্যা করেন। ঐ রাতের মধ্যেই এ-খবর পটিয়া পিটিআই ক্যাম্পে পৌঁছালে পাকসেনারা ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ২৬শে অক্টোবর ভোরে একদল রাজাকার ও মুজাহিদকে হাইদগাঁওয়ে প্রেরণ করে। তারা পটিয়া বিওসি রোড থেকে আকবরিয়া রোড হয়ে জিয়ার পাড়ার ভেতর দিয়ে হাইদগাঁওয়ের বাইন্যাপাড়ায় পৌঁছে সেখানকার পণ্ডিতবাড়িতে গণহত্যা চালায়। তারা দুপুর পর্যন্ত বর্বরতম তাণ্ডব চালিয়ে ৭ জনকে হত্যা ও দুজনকে আহত করে। এসময় পণ্ডিতবাড়িসহ বাইন্যাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি পাড়ায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক নারীকে ধর্ষণও করা হয়। এ গণহত্যায় শহীদ ৭ জন হলেন: অম্বিকার চরণ চৌধুরী (পিতা নগেন্দ্রলাল চৌধুরী), বিজয়কৃষ্ণ চৌধুরী (পিতা সুরেন্দ্রলাল চৌধুরী), উপেন্দ্রলাল চৌধুরী (পিতা রামরতন চৌধুরী), মনোরঞ্জন চৌধুরী (পিতা নবীনচন্দ্ৰ চৌধুরী), শম্ভুনাথ চৌধুরী (পিতা সুরেন্দ্রলাল চৌধুরী), যতীন্দ্র মোহন চৌধুরী (পিতা অখিলচন্দ্র চৌধুরী) এবং নিকুঞ্জ মুহুরি (পিতা বঙ্গ চৌকিদার, মুহুরিপাড়া, হাইদগাঁও ২নং ওয়ার্ড)। আহত দুজন হলেন: সারদা চৌধুরী (পিতা রামকুমার চৌধুরী) এবং সুধাংশু নন্দী চৌধুরী (পিতা হরিকৃষ্ণ নন্দী চৌধুরী)। দুপুরের পর রাজাকার ও মুজাহিদরা চলে গেলে স্বজনরা লাশগুলো সংগ্রহ করে স্থানীয় শ্মশানে দাফন করেন। এ গণহত্যার বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি হাইদগাঁও এলাকার মৃণাল কান্তি চৌধুরী বাদী হয়ে পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বর্ণনা: জি আর ২৫৫/৭২, ঘটনার তারিখ ও স্থান, হাইদগাঁও, থানা- পটিয়া, ২৬.১০.১৯৭১। মামলা নং ও ধারা: পটিয়া পিএস কেস নং ৪২, তারখি ২৯.২.৭২, US/302/436/34, BPC R/W 11, BDC 0/72। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ: বেআইনি সমাবেশ, ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হত্যা। বাদীর নাম: মৃণাল কান্তি চৌধুরী, পিতা- মৃত উপেন্দ্রলাল চৌধুরী, হাইদগাঁও, থানা- পটিয়া, চট্টগ্রাম। আসামিদের নাম: বাদশা মিয়া (পিতা আবদুর রশিদ, হাইদগাঁও), আজহার রহমান (পিতা আবদুর রশিদ, হাইদগাঁও), লিয়াকত উল্লা (পিতা নাজির আহমেদ মেহেদি, হাইদগাঁও), সুলতান আহমেদ (পিতা আলী আহমেদ, হাইদগাঁও), মো. ইদ্রিস (পিতা ইমাম শরীফ, হাইদগাঁও), আবদুস সবুর (পিতা আমানত আলী, হাইদগাঁও), আবসুদ সবুর (পিতা আবদুস সোবহান, হাইদগাঁও), আলী আহমেদ (পিতা মনির আহমেদ, হাইদগাঁও), আবদুল আলী (পিতা জানু মিয়া, হাইদগাঁও) এবং কালা মিয়া (পিতা আকাব আলী, হাইদগাঁও, পটিয়া)। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড