You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.22 | বাইশকাইল গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল) - সংগ্রামের নোটবুক

বাইশকাইল গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

বাইশকাইল গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ২২শে অক্টোবর। এতে ১১ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে বাইশকাইল গ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ গ্রামে ১৩০টি হিন্দু পরিবারের বসবাস ছিল। তাদের প্রায় সকলেই ছিল পাইট্টা সম্প্রদায়ভুক্ত। ১৯৭১ সালের ২২শে অক্টোবর পাকবাহিনী হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামটিতে গণহত্যা চালায়। এদিন সকাল ১১টায় চতিলার গ্রামের কুখ্যাত -রাজাকার সোমেশ মেম্বার ও আতরবাড়ির রাজাকার মফেজ মেম্বার হানাদারদের সঙ্গে এসে গ্রামটিতে টহল দিয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। পাকবাহিনী আবার গ্রামে আসতে পারে এ আশঙ্কায় গ্রামবাসী অনেকেই প্রাণের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রায় দুঘণ্টা পর পাকবাহিনীর ঐ গ্রুপটি আবার বাইশকাইল গ্রামে ফিরে আসে। তারা বাড়িবাড়ি তল্লাশি চালায়। অনেক নারীকে তারা ঘরের মধ্যেই নির্যাতন করে। আবার অনেককে জোড় করে ধরে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে এনে নির্যাতন করে। পুরুষদের মধ্যে ১১ জনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পুরো গ্রাম প্রদক্ষিণ শেষে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর লাশগুলো পুকুরে ফেলে দেয়। তারা ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। সেদিন যারা গণহত্যার শিকার হন, তারা হলেন- গোবিন্দ কুমার চন্দ (পিতা কৃষ্ণ কুমার চন্দ), বানেশ্বর চরণ চন্দ (পিতা গোপাল চরণ চন্দ), হরিকান্ত চন্দ (পিতা মোকন্দ চন্দ), যোগেশ চন্দ্র ভৌমিক (পিতা যুধিষ্ঠির চন্দ্র ভৌমিক), মতিলাল ভৌমিক (পিতা সুবল চন্দ্র ভৌমিক), প্রফুল্ল চন্দ্র ভৌমিক খোকা, বসন্ত কুমার চন্দ (পিতা অর্জুন কুমার চন্দ), গোবিন্দ চন্দ (পিতা গোপাল চন্দ), ক্ষিতীশ কুমার চন্দ (পিতা কোকন কুমার চন্দ), উমাচরণ চন্দ (পিতা কৃষ্ট কুমার চন্দ) ও যতীন্দ্র মোহন কর্মকার (হাসরা, কালিহাতী)।
হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে গোপালপুর ক্যাম্পে প্রত্যাবর্তন করে। ভয়ে কেউ লাশগুলো সৎকার করতে সাহস পায়নি। রাজাকাররা পুরো গ্রাম লুট করে এরপর অবশিষ্ট হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। দেশ স্বাধীন হলে পুকুর থেকে নিহতদের হাড়গোড় তুলে মাটিচাপা দেয়া হয়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড