বাংলার বাণী
ঢাকা: ১২ই অক্টোবর, শুক্রবার, ২৫শে আশ্বিন, ১৩৮০
ঈদ এসে গেলোঃ ওজি-এল-এর সব কাপড় কবে আসবে
পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত প্রায়। চিরকাল ঈদ এর পবিত্র দিনটিকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানুষ আত্মীয়-পরিজনের জন্য নতুন কাপড় কিনে থাকে। বাংলার মানুষের এটা চিরায়ত নিয়ম। এবারের ঈদকে সামনে রেখে দেশের সাধারন মানুষ সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা কাপড় কেনার সংগতি হারিয়ে ফেলেছে। বাজারে যে সকল কাপড় রয়েছে তার দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দশ টাকার কাপড় তিরিশ-চল্লিশ টাকায় বিক্রি হওয়া বর্তমান বাজারের একটি প্রচলিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুদিন ধরে এই অচলাবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করে এসেছি শেষবধি আমরা আশা করেছিলাম যে, কতৃপক্ষ পবিত্র ঈদের পূর্বেই ঘোষিত কাপড় আমদানির কাজ ত্বরান্বিত করে বাজারে কাপড় ছাড়তে সক্ষম হবেন। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারের ঈদের পূর্বেও সরকার বাজারে কাপড় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
টি.সি.বি ছাড়াও সরকার এক বিরাট পরিমাণ কাপড় ও জি এল এর মাধ্যমে আমদানি করবেন বলে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ জানে। এমনকি কতৃপক্ষ বার বার ঘোষণা করেও দেশবাসীকে জানিয়ে রেখেছেন ও জি এল এর কাপড় এসে গেলে দেশে কাপড়ের সংকট প্রায় দূরীভূত হবে। আমরা বহুদিন পূর্বে ওজি-এল এর কাপড় আসছে না বলে এক সংবাদ পরিবেশন করার পর সরকার তার পক্ষ থেকে এক প্রেস নোট দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, তিরিশে জুলাই এর পরিবর্তে পনেরই সেপ্টেম্বর ওজি-এল এর কাপড় এসে পৌছবে। সরকারি তরফ থেকে ধার্যকৃত দিন প্রথমে তিরিশে জুলাই ও পরে পনেরোই সেপ্টেম্বর বহুদিন পূর্বে পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ও জি এল এর কাপড় এখনো আসেনি। কর্তৃপক্ষ তার প্রেস নোটে উল্লেখ করেছিলেন যে, গত পনেরই সেপ্টেম্বরের মধ্যে নাকি শতকরা নব্বই ভাগ কাপড় এসে পৌঁছাবে এবং বাকি দশ ভাগ কাপড় নানা প্রতিকূল কারণের জন্য জাহাজীকরণ হতে অসুবিধা হবে। পনেরোই সেপ্টেম্বর গত হয়ে গেলে আমাদের পক্ষ থেকে ষোলই সেপ্টেম্বর আবার সংবাদ পরিবেশন করে বলা হয় যে, আগামী দু’মাসের ওজি এল এর কাপড় সব ঠিক মত এসে পৌঁছাবে কিনা সন্দেহ। তবে আগামী অর্থাৎ বর্তমান মাসের ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে পঞ্চাশ ভাগ কাপড় আসবে বলে আশা করা যায়। তবু সেদিনের সংবাদে সন্দেহ করে বলা হয়েছিল যে-যেহেতু কাপড় তৈরীর অবস্থায় রয়েছে এবং জাহাজীকরণে ও নানা অসুবিধা আছে সেহেতু কবে নাগাদ কাপড় আসবে তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। বস্তুতপক্ষে সমাগত ঈদের পূর্ব মুহুর্তে এসে আমরা আজ শঙ্কিত চেয়ে ও জি এল এর সব কাপড় কবে আসবে। ওজি এল এর কাপড় আমদানিতে যে একটি নিশ্চিত ঘাপলা রয়েছে তা সরকারের বার বার দিন ধার্য করে দেবার পরও বিলম্ব হওয়ায় দেশবাসী অনুমান করে নিয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ তার ব্যর্থতা পূরণের জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করছেন বলে মনে হয় না। কাপড় সংকট এতই নিদারুণ যে কর্তৃপক্ষের কি সুবিধা আর অসুবিধা রয়েছে তা জনগণ আর চায় না। ঈদের কাপড় পাওয়াই তাদের ন্যায্য অধিকার। দীর্ঘদিন ধরে কাপড় ‘আসবে’ বা ‘আসছে’ বলে কর্তৃপক্ষীয় আসার সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এবার সত্যিকার অর্থে দেশবাসী পবিত্র ঈদের পুর্বে আত্মীয়-পরিজনের পরনে একটি কাপড় তুলে দিতে সক্ষম হোক এটাই আমাদের দাবি। মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে টাল বাহানা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করব সরকার ঈদের পূর্বে বাংলার বস্ত্র সমস্যার জর্জরিত মানুষের জন্য বাস্তবতা কিছু করবেন।
সব শিয়ালের এক রা
চিলির বুক থেকে রক্তের দাগ মুছতে না মুছতেই সুয়েজ খাল আর গোলান মালভূমিতে এসে আবার শান্তির শুভ্র পতাকা রক্তাক্ত হলো। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইন্ধনই যে আরব-ইসরাইল সংঘর্ষের প্রেরণা জুগিয়েছে, তা আজ আর বিশ্ববাসীর কাছে অবিদিত নেই। মার্কিনী মুরব্বিরা এখন সরাসরি ন্যাক্কারজনক ইসরাইলি হামলার পেছনে মদদ দিচ্ছে, ইসরাইলি স্বার্থ রক্ষার জন্য সামরিক সম্মান দিয়ে সার্বিক সাহায্যদানের জন্য ওকালতি করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্য ও বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, মার্কিন সিনেটের এডওয়ার্ড কেনেভীও অন্যান্য সিনেটরদের সুরে সুর মিলিয়েছেন। মিশর ও সিরিয়ার সাথে বর্তমান যুদ্ধে ইসরাইল যেসব বোমারু বিমান ও সমর সম্ভার খুইয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণের জন্য সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেভী নিক্সন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরাইল মার্কিন সরকারের কাছে যেসব সমরাস্ত্র চেয়েছেন সিনেটর কেনেভী তা অবিলম্বে প্রেরণের জন্য নিক্সন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আত্মরক্ষার জন্য নাকি ইসরায়েলকে মার্কিন সমর সম্ভার দিয়ে সাহায্য করা দরকার। এডওয়ার্ড কেনেভীর মত বিবেকবান মানুষ বলে পরিচিত ব্যক্তিরও যখন আরবদের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রামকে পর্যদুস্ত করার জন্য ইসরাইলের স্বপক্ষে ওকালতি করেন, তখন আমাদের চোখের সামনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী অমানবিক নীতি প্রকট হয়ে ওঠে। মুক্তিকামী আরবীয়দের প্রতি যেখানে নৈতিক সমর্থন দান করা একান্ত বাঞ্ছিত সেখানে সিনেটর কেনেভী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় মত্ত হয়ে উঠেছেন। বাড়ি তাজ্জব কান্ড বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেভী সোচ্চার সমর্থন জানিয়েছিলেন। বিশ্বের অন্যান্য মুক্তি সংগ্রামীদের প্রতিও সিনেটর কেনেভীর ভূমিকা বলিষ্ঠই হয়েছিল। কিন্তু তিনি ইজরাইলি নগ্ন হামলা কে নিন্দা না করে কেন যে মার্কিন অস্ত্র পাঠানোর জন্য এত প্রতি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেটাই আশ্চর্যের বিষয় । আরবীয়রা তাদের হৃত জমি পুনরুদ্ধার এর জন্য যুদ্ধ করছে। জাতিসংঘ ইসরাইলের কবল থেকে আরবদের পবিত্র ভূমি ফিরিয়ে দিতে পারেনি। সাম্রাজ্যবাদীদের খপ্পরে পড়ে ইসরাইল আজ আরবে ওদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং এ হামলা অব্যাহত রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদ শিরোমণি মার্কিন সরকারের সাহায্য চাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন শক্তিও এ ব্যাপারে আদা জল খেয়ে লেগেছে। মার্কিন সিনেটর কেন্দ্রীয় ইসরাইলকে শয়তানের ওকালতি করে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকেই সমর্থন করছে। অবস্থাদৃষ্টে আমাদের মনে হচ্ছে যে সব শিয়ালেরই এক রা। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদী ঘাঁটি যাতে অটল থাকে সেজন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের চক্রান্তের বেরাজাল বিস্তৃত করে চলেছে। সিনেটর কেনেভীর কথা বার্তায়ও সেই রকমই ইঙ্গিত পাচ্ছি।
ভেবে অবাক হই যে, সিনেটর কেনেভীর মত মানুষও শেষাবধি জঙ্গী ইসরাইলের সহায়তা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। ইসরাইলি সম্প্রসারণবাদ কে সহায়তা করতে গিয়ে সিনেটর কেনেভি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন নীতি সমর্থন করছেন বলে আমাদের বিশ্বাস। মুখে শান্তির বুলি, কাজে যুদ্ধের আগুন কে উস্কে দেয়ার নীতি গ্রহণ কে বিশ্বের জাগ্রত শক্তিগুলো কিছুতেই সমর্থন করতে পারে না। আরবিয়দের জবর-দখল ভূমি থেকে ইসরাইলকে সরে যেতে হবেই। সাম্রাজ্যবাদের লেজুড় শেয়ালগুলো হুক্কা হুয়া করবেই-ভূতের মুখে তো আর রাম নাম শোভা পায় না, তাই বর্ণচোরা শেয়ালগুলো ইসরাইলের জন্য কাঁদুনি বা গাইবার তা গেয়ে যাক। আরবিদের সত্য-ন্যায়ের সংগ্রাম জয়যুক্ত হবেই।
এক্সরে ফিল্মের অভাব
এক্সরে ফিল্ম এর অভাবে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর রোগী ও প্রাইভেট রোগীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে বলে সংবাদ প্রকাশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট এক আদেশ বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আউটডোর ও প্রাইভেট এক্সরে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধুমাত্র ওয়ার্ডের এবং জরুরি বিভাগের অতি জরুরী দুদিকেই বিভাগীয় অধ্যাপকদের লিখিত আবেদন সাপেক্ষে এক্সরে করা যাবে বলে নির্দেশ নামা বলা হয়েছে।
প্রকাশ, বর্তমানে যে সামান্য এক্সরে ফিল্মের স্টক রয়েছে তাতে এই জরুরি এক্স-রেও শুধুমাত্র সপ্তাহখানেক চালানো যাবে। কেন্দ্রীয় মেডিকেল স্টোর জানিয়েছেন, তাদের স্টকে এখন কোন এক্সরে ফিল্ম নেই।
এক্সরে ফিল্ম নেই! ফিল্ম এর অভাবজনিত যে সংবাদটি স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, অচিরেই এক্সরে বিভাগগুলোতে তালা ঝুলবে। ফিল্ম এর অভাবে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হবে না-এমনটি কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো সবসময়ই দেখা যায় যে, যখন গভীর সমস্যা ও সংকটের আবর্তে পাহাড় তরী ডুবে যায় তখনই হই চই ওঠে। এর আগে নয়। ফিল্ম নেই। ফিল্মের অভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে এটা তো জানা কথা। সুতরাং আগেভাগে প্রস্তুতি না নিলে তালা ঝুলিবে এ আর বিচিত্র কি!
প্রশ্ন হল যারা ফিল্ম নিয়ে কারবার করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, ফিল্মের স্টক কতদিনের মজুদ রয়েছে। আগে ভাগে যদি ফিল্ম আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে ঘাটে এসে তরী ডুবানো সে জন্য দায়ী কে হবে?
আমরা ফিল্ম সংকট এর পরিপ্রেক্ষিতে এ কথাই বলবো যে, জরুরী ভিত্তিতে এক্সরে ফিল্ম আমদানির ব্যবস্থা করা হোক। আর কে বা কাদের জন্য ফিল্ম সংকটের সৃষ্টি হয়েছে সেটাও তদন্ত করা হোক। কারণ লাল ফিতার ভূত এখনো আমাদের দেশ থেকে যায়নি। লাল ফিতার বদৌলতে এহেন সংকট সৃষ্টি হয়েছে কিনা তাই বা কে জানে!
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক