You dont have javascript enabled! Please enable it! বাউশা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঘা, রাজশাহী) - সংগ্রামের নোটবুক

বাউশা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঘা, রাজশাহী)

বাউশা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঘা, রাজশাহী) পরিচালিত হয় ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এতে ৫ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৫ জন রাজাকার ও শান্তি কমিটির ২ জন সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। রাজাকারদের ১০টি রাইফেল ও ২টি শর্টগান মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
বাঘা উপজেলার একটি গ্রামের নাম বাউশা। বাউশা নামে একটি ইউনিয়ন পরিষদ এবং একটি সাপ্তাহিক হাটও রয়েছে। বাউশা গ্রামেই বাউশা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি অবস্থিত। এ ভবন সংলগ্ন স্থানে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে, যা বাউশা হাট নামে পরিচিত। বাউশা হাটের দিন প্রচুর লোকের সমাগম হয়। এ হাটে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রাজাকাররা একটি ক্যাম্প নির্মাণ করে। ক্যাম্পটি হাটুরে এবং আশ-পাশ এলাকার লোকজনের জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজাদ আলী ও নাজির হোসেনের নেতৃত্বাধীন ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা এ-সময় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার চিলমারি চরের খাজুরারথাকে ইপিআর বাহিনীর পরিত্যক্ত একটি বিওপিতে অবস্থান করছিলেন। ভারতের চাকুলিয়ায় যুদ্ধবিদ্যায় উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব গেরিলাযোদ্ধা এখান থেকে চারঘাট- বাগাতিপাড়া এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের কর্মকাণ্ডের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিলেন। বাউশা এলাকায় রাজাকারদের অবস্থান গ্রহণ এবং হাটুরে ও গ্রামবাসীর ওপর তাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের খবর জানতে পেরে তাঁরা গেরিলা পদ্ধতিতে অকস্মাৎ আক্রমণ চালিয়ে রাজাকার ক্যাম্পটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্প অপারেশনের জন্য রাত ৯টার দিকে আজাদ আলী ও নাজির হোসেন সদলবলে বাউশার উদ্দেশ্যে ছোট-ছোট নৌকায় করে রওনা দেন। তাঁরা বাউশা বাজারের বিপরীত দিকে অবস্থিত বাগাতিপাড়া উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামে এসে পৌঁছান। শুক্রবার হাটের দিন বিকাল ৩টায় আজাদ আলী ও নাজির হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে অপারেশন শুরু করেন। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আজাদ গ্রুপের মো. আজাদ আলী (কমান্ডার), মো. মাহবুবউল গণি বাবলু (ডেপুটি কমান্ডার), মো. মোজাম্মেল হক, মো. আনসার আলী, মো. আকসেদ আলী, মো. এজার আলী, মো. উসমান আলী, মো. বজলুর রহমান, মো. আব্দুস সাত্তার, মো. মোকসেদ আলী, মো. আফসার আলী ও মো. হামিদুল হক; নাজির গ্রুপের মো. নাজির হোসেন (কমান্ডার), মো. মোজাম্মেল হক (ডেপুটি কমান্ডার), মো. মোজাম্মেল হক (জিপ্পু), মো. লোকমান হোসেন, মো. জলিল মোল্লা, মো. রবিউল ইসলাম আবু, মো. জামাল উদ্দীন, মো. ছমির উদ্দিন, মো. শফিউর রহমান (শফি), মো. ইয়াসিন আলী, মো. সাদেক আলী, মো. আতিউর রহমান, মো. ফজলুল হক (টাঙ্গাইল) ও মো. মখলেসুর রহমান মুকুল (হড়গ্রাম)। আজাদ আলীর দল বিকেল ৪টার দিকে ৩০৩ রাইফেল নিয়ে অতি সংগোপনে নৌকায় করে হাটে প্রবেশ করেন। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা দলকে দেখে পালাতে থাকে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। ১০টি রাইফেল ও ২টি শর্টগান মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ৫ জন রাজাকার ও ২ জন শান্তি কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। এ অপারেশনের সাফল্যে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগণ খুবই অনুপ্রাণিত হন। [মোস্তফা কামাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড