You dont have javascript enabled! Please enable it! বলাখাল যুদ্ধ (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

বলাখাল যুদ্ধ (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর)

বলাখাল যুদ্ধ (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় তিনবার আগস্ট মাসে দুবার এবং নভেম্বর মাসে একবার। এতে কয়েকজন রাজাকার ধরা পড়ে এবং বাকি রাজাকার ও পাকসেনারা পালিয়ে যায়। তাদের কিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল গ্রামের রেলস্টেশন, হরি সাহার বাড়ি ও ওয়ারলেস নামক স্থানে পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম যুদ্ধটি হয় বলাখাল রেলস্টেশনে। নাসিরকোট, বাজনখাল, খিলপাড়া ও কাপাইকাপসহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন শহীদুল্লা (নাসিরকোট) ও আবদুল রব কসাই। তাঁদের সহযোদ্ধাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন— টেলু (খিলপাড়া), বাচ্চু মিয়া – (কাপাইকাপ), জয়নাল চেয়ারম্যান (কাপাইকাপ) ও এমদাদ উল্লাহ মাস্টার (কাপাইকাপ)।
বলাখাল রেলস্টেশনের পাশে রাজাকারদের একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল। তারা নিয়মিত হাজীগঞ্জ বাজারে হামিদিয়া জুট মিলে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ রাখত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিত। তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লুটপাট চালাত। রাজাকারদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় এবং আশপাশের লোকজনসহ মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে রাজাকারদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির এক পর্যায়ে রাজাকাররা পালিয়ে যায় এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
বলাখালের অপর যুদ্ধটি হয় আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিকে। পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ যুদ্ধটি হয় বলাখাল গ্রামের হরি সাহার বাড়িতে। পাকিস্তানি সৈন্যরা হরি সাহার বাড়িতে আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে কমান্ডার জহিরুল হক পাঠানের (অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য) নেতৃত্বে পাল্টা আক্রমণ করেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা হরি সাহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে স্থান ত্যাগ করে।
১০ই নভেম্বর বলাখালে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের আর একটি যুদ্ধ হয়। হাজীগঞ্জ ও বলাখালের মাঝখানে ওয়ারলেস নামক স্থানে এ যুদ্ধটি হয়। কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম মোহন (পিতা আলহাজ আলতাফ আলী বেপারী, বিলওয়াই)-এর নেতৃত্বে আসলাম মিয়া (পিতা মুসলিম মিয়া, বিলওয়াই)-সহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এতে অংশ নেন। ওয়ারলেস মাঠে রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। সেখানে ৩০ জনের মতো রাজাকার অবস্থান করত। মাঝে-মাঝে পাকসেনারা সেখানে আসত। ঘটনার দিন বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের আক্রমণ করেন। অতর্কিত আক্রমণে কয়েকজন রাজাকার আহত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। রাজাকারদের ১০টি অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। [জহিরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড