বলিদ্বারা গণহত্যা (রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও)
বলিদ্বারা গণহত্যা (রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও) সংঘটিত হয় ১২ই মে। এতে ২০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। পাকবাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা এ গণহত্যা সংঘটিত করে। এদিন পাকবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে সরাসরি রাণীশংকৈলের বলিদ্বারা বাজারের ইসলামিয়া হাসকিং মিলে আক্রমণ করে। তাদের সহযোগিতা দেয় স্থানীয় রাজাকার রহমতউল্লাহ মৌলভি।
রাণীশংকৈল উপজেলার ৩নং হোসেনগাঁও ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মহেন্দ্র নাথ রায়। একজন শিক্ষানুরাগী, স্পষ্টভাষী ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ এলাকার হিন্দু-মুসলমান অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে যায়। মহেন্দ্র নাথের নেতৃত্বে শরণার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা হতো। হোসেনগাঁও ইউনিয়নে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মালদহ থেকে আগত অনেক লোক বাস করত, যাদের স্থানীয়ভাবে ‘মালদয়িহা’ বলা হতো। তাদের প্রায় সবাই পাকিস্তানপন্থী ছিল। তাদের নেতৃত্ব দিত রহমতউল্লাহ মৌলভি। সে মহেন্দ্ৰ নাথকে প্রাণ বাঁচাতে হলে ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এর কয়েকদিন পর রহমতউল্লাহ মৌলভি ও স্থানীয় অন্য রাজাকারদের প্ররোচনায় পাকবাহিনী ১২ই মে ভোরে ঠাকুরগাঁও থেকে এসে বলিদ্বারা বাজারে অবস্থিত ইসলামিয়া হাসকিং মিলে হানা দেয়। মিল আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে মালিক নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে তাকে গুলি করা হয়। এরপর হানাদাররা মহেন্দ্র নাথের বাড়িতে আক্রমণ করে। মহেন্দ্র নাথকে না পেয়ে তাঁর বাড়ির কয়েকজনকে ধরে নিয়ে আসে। এ-সময় মিল মালিক নজরুল ইসলাম, মিলের নিরাপত্তারক্ষী ও মহেন্দ্র নাথের বাড়ির লোকজনসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মো. নজরুল ইসলাম (পিতা মহিরুদ্দিন আহাম্মদ, রাঙ্গাটুঙ্গি), বোয়ালু (পিতা লাল মোহাম্মদ, রাঙ্গাটুঙ্গি), ক্ষিরখোয়া (পিতা লাল মোহাম্মদ, রামপুর), ইমাম আলী (পিতা খোশ আহাম্মদ, বলিদ্বারা), ধীরেন্দ্র নাথ রায় (পিতা ধর্মনারায়ণ, বলিদ্বারা), ঘামানু রাম বর্মণ (পিতা কার্তিক সিংহ, বলিদ্বারা), ঝারু রাম বর্মণ (পিতা ঘামানু, জওগাঁ), উপেন চন্দ্র রায় (জওগাঁ), প্রিয়নাথ বর্মণ (পিতা জগেন্দ্র নাথ খোকা, বলিদ্বারা), মুরালি রাম বর্মণ (পিতা পাইসু বর্মণ, বলিদ্বারা), চেরকু রাম বর্মণ (পিতা সুবানা, বলিদ্বারা), লাল রাম বর্মণ (পিতা শিয়ামু বর্মণ, বলিদ্বারা), ননী গোপাল রায় (পিতা সুরেন্দ্রনাথ রায়, কলমদা), গন্ধা রাম বর্মণ (পিতা ছেতলা বর্মণ, কলমদা), ঝিনারু রাম বর্মণ (পিতা সহরু বর্মণ, বলিদ্বারা), লট খটু বর্মণ (রাণীশংকৈল), হেদেসি (রাণীশংকৈল), মহশীন আলী (পিতা উমের আলী মণ্ডল, বলিদ্বারা), মহেন্দ্র নাথ রায় (পিতা হরিমোহন রায়, বলিদ্বারা) এবং মংলু মোহন (বলিদ্বারা)। [মো. তাজুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড