You dont have javascript enabled! Please enable it!

বশরতনগর রশিদিয়া মাদ্রাসা অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)

বশরতনগর রশিদিয়া মাদ্রাসা অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ২৯শে নভেম্বর। চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার এ অপারেশনে একজন মুক্তযোদ্ধা শহীদ এবং দুজন আহত হন।
ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে বরমার শাহজাহান ইসলামাবাদী (পিতা মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী)- র বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মহিউল আলমের ঘাঁটিতে খবর আসে যে, পার্শ্ববর্তী বৈলতলী ইউনিয়নের মাইজপাড়া হিন্দুপাড়ায় রাজাকারআলবদর ও মুজাহিদরা হামলা চালাচ্ছে। তখন এ ঘাঁটি থেকে কমান্ডার আবদুস সবুর খান (বিমান বাহিনীর এসএসি ৮০৬৯৯)-এর নেতৃত্বে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা মাইজপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের আসার খবর পেয়ে দালালরা পালিয়ে বৈতলীর বশরতনগর রশিদিয়া মাদ্রসা ক্যাম্পে চলে যায়। সেখানে পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনীও ছিল। এ ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিল শান্তি কমিটির নেতা আহমদ সৈয়দ (পিতা আজিজুর রহমান, বৈলতলী)। মাদ্রাসায় অবস্থানকারী রাজাকার, আলবদর ও মুজাহিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো: নুর মোহাম্মদ (চৌধুরী পাড়া, পূর্ব চন্দনাইশ), মোজাফ্ফর আহমদ (সাতবাড়িয়া), ছিদ্দিক আহমদ (সাতবাড়িয়া), মুফতি মফজল আহমদ, নুরুল হক চৌধুরী (বৈলতলী), হেফাজুতুর রহমান চৌধুরী (বৈলতলী), আব্বাস আলী (সাতবাড়িয়া), মো. কাশেম চৌধুরী (বৈলতলী), মো. ইউছুপ চৌধুরী (বৈলতলী), মো. হাশেম চৌধুরী (বৈলতলী), জগির আহমদ (বৈলতলী), আজল বকসু চৌকিদার (বৈলতলী), বুচুক আলী (বৈলতলী), নুরুল আলম (বৈলতলী), আবুল বশর (বৈলতলী), নেজামত আলী (বৈলতলী), জালাল আহমদ (বৈলতলী), রাজা মিয়া (বৈলতলী), জাহাঙ্গির আলম (বৈলতলী), বাচামিয়া (বৈলতলী), সফিকুর রহমান (বৈলতলী), রাজা মিয়া (বৈলতলী), মো. ইছহাক (বৈলতলী), কালা বকসু (বৈলতলী), মো. জহিরুল আলম (বৈলতলী), আবদুল্লাহ (বৈলতলী), মো. ফসিউল আলম (বৈলতলী), আবদুল মালেক (বৈলতলী), আবদুল মালেক (বৈলতলী), আবদুল খালেক (বৈলতলী), জাহেদ হোসেন চৌধুরী (বৈলতলী), খায়ের আহমদ (বৈলতলী), মো. ইস্কান্দর (বৈলতলী), আশরাফ আলী (বৈলতলী), মো. ইদ্রিস (বৈলতলী), মো. ইসমাইল (বৈলতলী), মতিয়ার রহমান (বশরতনগর), সামছুল আলম (বশরতনগর), হোসেন (বশরতনগর), আবদুল মান্নান (জাফরাবাদ), জাহিদ হোসেন (বশরতনগর) এবং খায়ের আহমদ (বশরতনগর)। মুক্তিযোদ্ধারা মাইজপাড়ায় এসে হামলাকারীদের বশরতনগর রশিদিয়া মাদ্রাসায় চলে যাওয়ার খবর পেয়ে সেদিকে রওনা দেন। বিকেল ৫টার দিকে পৌঁছে তাঁরা মাদ্রাসার পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে এম্বুশ করেন। মাদ্রসার ভেতরে অবস্থানরত হানাদাররা টের পেয়ে আহমদ সৈয়দের নির্দেশে তাঁদের দিকে ফায়ার শুরু করে। কমান্ডার আবদুস সবুর খানের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারাও ফায়ার শুরু করেন। এক পর্যায়ে মহিউল আলমের ঘাঁটি ও অন্যান্য জায়গা থেকে আরো মুক্তিযোদ্ধা এসে যোগদান করেন। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ জনে উন্নীত হয়। কিন্তু হানাদারদের সংখ্যা ছিল আরো অনেক বেশি। তাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্রও ছিল বিপুল পরিমাণে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রায় আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর রাত ৮টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন।
এ-যুদ্ধে কমান্ডার আবদুস সবুর খান দেয়াল টপকে মাদ্রাসার ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। এছাড়া মনির আহমদ ও এম এম নওশাদ আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। যুদ্ধশেষে আবদুস সবুর খানের লাশ শান্তি কমিটির নেতা আহমদ সৈয়দের নির্দেশে মাদ্রাসায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরদিন ৩০শে নভেম্বর বিকেলে লাশটি শঙ্খ নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। ২রা ডিসেম্বর সকালে লাশটি ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেলে সংগ্রহ করে দাফন করা হয়। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কমান্ডার আবদুস সবুর খান (পিতা আলী হোসেন খান, বরমা), আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইছহাক, ভাইখলিফাপাড়া, উত্তর হাশিমপুর), মনির আহমদ (পিতা লাল মিয়া, মাইগাতা, বরমা), এম এম নওশাদ আলী (পিতা বদরুজ্জামান, বাইনজুরী, বরমা), মো. হাবিবুর রহমান (পিতা হাজি আবদুর রহিম, বরকল), জাহাঙ্গির আলম, ছেবন্দি, বরমা), নুর মোহাম্মদ (পিতা মো. ছিদ্দিক, বাইনজুরী, বরমা), নুরুল হুদা, মো. সোলায়মান (পিতা মোখলেছুর রহমান, বরকল), ইলিয়াছুর রহমান, আবুল কালাম (পিতা ওবায়দুর রহমান, বরকল), এম এ মজিদ (পিতা ছৈয়দুর রহমান, বৈলতলী), মো. বাকের (পিতা এজাহার মিয়া, জাফরাবাদ, বৈলতলী), নুরুল ইসলাম (পিতা এজাহার মিয়া, মাইগাতা, বরমা), মো. মঞ্জুরুল হক খান (পিতা মীর আহমদ খান, বরমা), এস এম আলমগীর আলম (পিতা বদিউল আলম, বাইনজুরী, বরমা), মাহমুদুর রহমান (পিতা লাল মিয়া, বাইনজুরী, বরমা), আবদুল হক (পিতা খুইল্যা মিয়া, জাফরাবাদ, বৈলতলী) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!