You dont have javascript enabled! Please enable it!

বরছাকাঠি গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর)

বরছাকাঠি গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর) সংঘটিত হয় ১০ই নভেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত এ গণহত্যায় ২১ জন মানুষ শহীদ হন।
স্বরূপকাঠি থানার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে সোহাগদল ইউনিয়নের একটি গ্রাম বরছাকাঠি। ১০ই নভেম্বর হানাদার বাহিনী স্বরূপকাঠির বৃহত্তম ইন্দুরহাট-মিয়ারহাট বাজারের সব দোকানপাট আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। একই সঙ্গে তারা বরছাকাঠি এবং ইন্দুরহাট-মিয়ারহাট বাজারের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর অসংখ্য বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। পাকসেনা ও তাদের দোসররা নিরপরাধ মানুষকে ধরে আনে। তাদের মধ্য থেকে ১৮ জনকে ২ জন করে এক সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধে। ওজু করার সুযোগ পেলে কেউ-কেউ শেষবারের মতো হাতে করে পানি পান করে নেয়। কাছারিউলায় একটি পুকুরপাড়ে তাদের দাঁড় করে গুলি করা হয় যাতে মানুষগুলো গুলিবিদ্ধ হয়ে পুকুরে পড়ে যায়। দুজন মো. রুস্তুম আলী হাওলাদার (পিতা মো. মোসলেম আলী হাওলাদার, সোহাগদল) এবং মো. কাঞ্চন মজুমদার (পিতা আলিম উদ্দিন, দক্ষিণ কৌরিখাড়া, সুটিয়াকাঠি) গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান। কাঞ্চন মিয়াকে সবার শেষে গুলি করা হয়। গুলি তার বুকের ডান পাশ ভেদ করে বের হয়ে যায়। কাঞ্চন মিয়ার সঙ্গে খেয়া মাঝি আ. কাদেরকে বাঁধা হয়েছিল। এদিন আ. কাদেরের সঙ্গে তার এক ভাইও শহীদ হন। এদিন আশপাশ থেকে আরো ৫ জনকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। এছাড়াও এদিন সুটিয়াকাঠির বেলতলায় শহীদ হন নূর হোসেন মিয়া (পিতা আ. কাদের) ও শুক্কুর মিয়া (পিতা মোদাচ্ছের হাজী)।
বরছাকাঠি গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মো. লাল মিয়া (পিতা আব্দুল কাদের)। তিনিসহ ৪ জন একত্রে ছিলেন। ৪ জন পাকসেনা একজন রাজাকার (শর্ষিনা মাদ্রাসার ছাত্র)-সহ এসেই ব্রাশ ফায়ার করে। নূর হোসেন মিয়া সঙ্গে-সঙ্গে শহীদ হন। মো. লাল মিয়ার শরীরে পাঁচটি গুলি লাগে। আহত হয়ে তিনি বেঁচে যান। অন্য দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। গণহত্যার পর আ. কাদের ও তার ভাই আ. রহমানকে সুটিয়াকাঠিতে একই কবরে সমাহিত করা হয়। শহীদ মো. সোলায়মান মিয়া, মো. শাহ আলম, মোজাফ্ফর আলী, জয়নাল আবেদিন, রফেজ উদ্দিন, মফেজ উদ্দিন, আবুয়াল হোসেন এ ৭ জনকে বরছাকাঠিতে একই কবরে সমাহিত করা হয়, যা ‘৭ জনের এক কবর’ নামে পরিচিত। ২০০৬ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তর বরছাকাঠি গণহত্যার স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করে।
বরছাকাঠি গণহত্যায় ২১ জন শহীদ হন। তারা হলেন- বরছাকাঠি গ্রামের মোজাফ্ফর আলী (পিতা হাজী আকুব্বার আলী মাঝি), মো. সোলায়মান আলী মাঝি (পিতা হাজী আকুব্বার আলী মাঝি), মো. শাহ আলম মাঝি (পিতা সোলায়মান আলী আলী মাঝি), মো. ইয়ার হোসেন তালুকদার (পিতা মো. হাবিল তালুকদার), মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার (পিতা মো. হাবিল তালুকদার), মো. আজিজুল হক বাহাদুর (পিতা মো. মোসলেম আলী তালুকদার), শাহ মো. নূরে আলম (পিতা শাহ আ. জব্বার), শাহ মো. লিলু আলম (পিতা শাহ আ. জব্বার), শাহ মো. চান মিয়া (পিতা শাহ মো. হাতেম আলী), মো. কাবারেক আলী ফকির (পিতা হাজী মো. সুন্দর আলী), মো. জবেদ আলী (পিতা মো. নাজির উদ্দিন), শাহ মো. মোকাম্মেল হোসেন (পিতা শাহ মো. ফরহাজ উদ্দিন), সোহাগদলের মফেজ উদ্দিন মাঝি (পিতা মমিন উদ্দিন মাঝি), রফেজ উদ্দিন (পিতা মমিন উদ্দিন মাঝি), মো. আবুয়াল হোসেন (পিতা মফেজ উদ্দিন), জয়নাল আবেদীন মাঝি (পিতা নাজেম উদ্দিন মাঝি), মুন্সি মো. কাঞ্চন (পিতা মুন্সি আ. মান্নান), সুটিয়াকাঠি গ্রামের দুই সহোদর আ. কাদের ও আ. রহমান (খেয়া মাঝি) (পিতা মো. ওহাজ উদ্দিন), সৈয়দুর রহমান হাওলাদার (পিতা মো. বাহর আলী হাওলাদার, কলারদোয়ানিয়া, নাজিরপুর) ও মো. হাবিবুর রহমান। [হাবিবুল্লাহ রাসেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!