বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত
বরুণ সেনগুপ্ত (১৯৩৪-২০০৮) ভারতের সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৪ সালের ২৩শে জানুয়ারি পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর তিনি সপরিবারে কোলকাতায় চলে যান (১৯৪৭)। তিনি বরিশালের বি এম স্কুল ও কোলকাতার টাউন স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিকম পাস করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি ১৯৬০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৫ সাল থেকে এ পত্রিকার প্রথম রাজনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রেরণের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর অসামান্য লেখা বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৮৪ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি বর্তমান (প্রথমে দৈনিক ও পরে সাপ্তাহিক) নামে একটি রাজনৈতিক পত্রিকা বের করেন। এছাড়াও তিনি সুখী গৃহকোণ নামে অপর একটি পত্রিকা বের করেন। এ দুটি পত্রিকা পশ্চিমবঙ্গে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
চলমান রাজনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরুণ সেনগুপ্তের লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুস্তক হলো- পালাবদলের পালা, সব চরিত্র কাল্পনিক, অন্ধকারের অন্তরালে, নেতাজির অন্তর্ধানের রহস্য ইত্যাদি। ২০০৮ সালের ১৯শে জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংবাদ পরিবেশন করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতে জনমত গঠনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি জেনারেল শ্যাম মানেকশ-এর সঙ্গে রাজনৈতিক সংবাদদাতা ও ভাষ্যকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বরুণ সেন গুপ্ত-কে ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড