বনপাড়া ফৌতি গোরস্থান স্মৃতিস্তম্ভ (জামালপুর সদর)
বনপাড়া ফৌতি গোরস্থান স্মৃতিস্তম্ভ (জামালপুর সদর) জামালপুর সদরে অবস্থিত। এটি একাত্তরের গণকবরের সাক্ষ্য বহন করছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর আলবদর বাহিনী অসংখ্য মানুষকে গুলি ও জবাই করে হত্যাশেষে মৃতদেহগুলো ফৌতি গোরস্থানে মাটিচাপা দেয় বা ফেলে রাখে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে সেসব শহীদদের স্মরণে ফৌতি গোরস্থানে এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।
ইট-বালু-সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটির শুরুতে চতুর্ভুজ আকৃতির একটি বেদী আছে। বেদীটির উচ্চতা ৩ ফুট, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং প্রস্থ ৭ ফুট। বেদীতে ওঠার জন্য দুই ধাপের একটি সিঁড়ি আছে। বেদীটি কালো টাইলসে আবৃত। বেদীর ওপর কৌণিকভাবে পরপর ৩টি অসম উচ্চতার পিলার বা স্তম্ভ আছে। প্রথম পিলার থেকে দ্বিতীয় পিলারের ব্যবধান ৮ ইঞ্চি এবং দ্বিতীয় পিলার থেকে তৃতীয় পিলারের ব্যবধান ৯ ইঞ্চি। প্রথম পিলারটির উচ্চতা সাড়ে ৯ ফুট, দ্বিতীয়টির উচ্চতা সাড়ে ৭ ফুট এবং তৃতীয়টির উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট। পিলার ৩টিতে হালকা গোলাপি রঙ করা। ৩টি পিলারেই একটি করে ছোট আকৃতির গোলাকার ছিদ্র আছে, যা ঘাতক আলবদর বাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যা করার প্রতীকী চিহ্ন এছাড়া তৃতীয় পিলারটির ওপর থেকে একটু নিচে অর্ধ বৃত্তাকারে একটি কাটা অংশ আছে, যা গাঢ় লাল রঙে রঞ্জিত। কাটা অংশটি আলবদর বাহিনী কর্তৃক জবাই করে হত্যা করার প্রতীক। পিলার ৩টি শহীদদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা শহীদ মিনারের আদলে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি একাত্তরের গণকবরের স্মৃতি ধারণ করে আছে।
ফৌতি গোরস্থানটি প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। যুদ্ধের সময় এটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সময় অনেকাংশ পরিষ্কার করা হয়। বিশ বছর আগে গোরস্থান প্রাঙ্গণে বনায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ছয়শ মেহগনি গাছ আছে। গোরস্থানের সামনের দিকে ইটের সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়েছে। তাতে একটি লোহার গেইট আছে। গেইট দিয়ে ঢুকে কয়েক গজ এগুলেই বামপার্শ্বে স্মৃতিস্তম্ভটির অবস্থান। গোরস্থানের বাকি তিন পার্শ্বে কাটাতারের বেড়া। গেইট থেকে সোজা গোরস্থানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত রয়েছে চলাচলের জন্য ৩ ফুট প্রশস্ত ইট বিছানো পথ। পথটির ডানপার্শ্বে রয়েছে দুটি পাকা বেঞ্চ। প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে এই স্মৃতিস্তম্ভে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। [আহমদ আজিজ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড