You dont have javascript enabled! Please enable it! বনোগ্রাম যুদ্ধ (চৌহালী, সিরাজগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

বনোগ্রাম যুদ্ধ (চৌহালী, সিরাজগঞ্জ)

বনোগ্রাম যুদ্ধ (চৌহালী, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। চৌহালী উপজেলার কোদালিয়া নদী এবং নলসোন্ধা নদীর তীরে এ-যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন যথাক্রমে আব্দুর রউফ দুলাল এবং শফিউল ইসলাম। চৌহালী উপজেলার বড় চৌহালী, চকচালুহারা, স্থল, চর মুরাদপুর, ঘোরজান, ফুকরী, রেহাইপুকরিয়া, মিরকুটিয়া, খাসধোলাই, বাগুটিয়া, বহলাকোল, জোতপাড়াবাজার, সম্ভুদিয়া, চর ছনিনবাদ, শাজানি প্রভৃতি এলাকার এবং টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কোদালিয়া স্কুলে রাতের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় খবর পান যে, উত্তরবঙ্গ থেকে ৮০-৮৫ জন পাকসেনা যমুনা নদী পাড় হয়ে তাঁদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ খবর পেয়ে তাঁরা খাওয়া ত্যাগ করে ৪০-৪৫ জনের একটি দল নিয়ে কোদালিয়া নদী পাড় হয়ে পজিশন গ্রহণ করেন। হানাদার বাহিনী কাছাকাছি আসতেই মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। আধুনিক অস্ত্রাদি থাকা সত্ত্বেও পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে শুরু করে। হানাদার বাহিনী গুলি করতে-করতে পালাতে থাকে আর মুক্তিযোদ্ধারা পেছন থেকে গুলি করে ধাওয়া করতে থাকেন। গোলাগুলির এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর কাদের (খাসধোলাই, চৌহালী) আহত এবং নজরুল ইসলাম (খাসধোলাই, চৌহালী) শহীদ হন। পলায়নপর হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা নাগরপুরের দিকে যেতে থাকে। পথে নলসোন্ধা নদীর ঘাটে একটি অর্ধভর্তি পাটের নৌকায় পাকসেনারা ওঠে। নৌকার মাঝি তার ছেলেকে গোপন ইশারায় নৌকার তলায় ফুটো করতে বলে। ছেলেটি বিশেষ কায়দায় ফুটো করে দিলে প্রায় ২০০ গজ দূরে গিয়ে নৌকাটি সম্পূর্ণ ডুবে যায়। এতে পাকসেনাদের সলিল সমাধি ঘটে। পরদিন চৌহালীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নদীতে জাল ফেলে হানাদার বাহিনীর ডুবে যাওয়া কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেন। অনেক পাকসেনার এক সঙ্গে সলিল সমাধি ঘটায় বনোগ্রাম যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে স্থান করে নেয়। [মো. শাহিন আলম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড