You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম বদিউল আলম বদি - সংগ্রামের নোটবুক

বদিউল আলম বদি, বীর বিক্রম

বদিউল আলম বদি, বীর বিক্রম আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকাস্থ মনিপুরি পাড়ায় বাস করতেন। তাঁর পিতার নাম মো. আব্দুল বারী ও মাতার নাম রওশন আরা খানম।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আরো কয়েকজনসহ বদিউল আলম বদি ত্রিপুরার মেলাঘরে ক্যাপ্টেন হায়দারের নেতৃত্বে আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পর ১৬ সদস্যের একটি দলের সদস্য করে তাঁকে ঢাকা ও তার আশপাশে গেরিলা অপারেশনের মাধ্যমে দখলদার বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। ঢাকায় অবস্থান করে দলটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক অভিযানের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
বদিউল আলম বদি ও তাঁর সহযোদ্ধারা জুন মাসে ঢাকা শহরে একই দিনে পরপর ৩টি চাঞ্চল্যকর অপারেশনের মাধ্যমে পাকবাহিনীর ভিত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। জানা যায়, পাকবাহিনী বিদেশী প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৯ই জুন একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনে আতংক সৃষ্টির লক্ষ্যে বদিউল আলম বদি ও তাঁর সহযোদ্ধারা ঐদিন যথাসময়ে দেয়াল টপকে হোটেলে প্রবেশ করে পরপর তিনটি গেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। সেখান থেকে রমনা থানার কাছে এক জামাত নেতার বাড়িতে গিয়ে তিনটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাঁরা চলে যান দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকা অফিসের কাছে। সেখানে দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে আরো দুটি সফল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাঁরা নিরাপদে তাঁদের গোপন আস্তানায় চলে যান। একই দিন রাজধানী ঢাকা শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এরকম তিনটি অভিযানে তাঁরা যে সাফল্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন, তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় ঘটনা। এতে পাকবাহিনী ও বিদেশীদের মনে প্রচণ্ড আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
২৫শে আগস্ট বদিউল আলম বদিসহ ৪ জনের একটি দল ধানমন্ডিতে এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। এদিন সকালে তাঁরা একটি গাড়িতে করে ধানমন্ডির ১৮নং রোডে জাস্টিস জব্বার খানের বাড়ির সামনে গিয়ে এক ঝটিকা আক্রমণের মাধ্যমে সেখানে প্রহরারত ৭-৮ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন। এ অপারেশন শেষ করে ৫নং রোড দিয়ে ফেরার পথে দেখেন এক স্থানে পাকসেনারা চলমান গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে। এ অবস্থায় তাঁরা তাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পাকবাহিনী তাঁদের গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে-সঙ্গে গাড়িতে বসা বদিউল আলম বদি, কাজী কামাল ও স্বপনের অস্ত্র গর্জে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে এক সেনাকর্মকর্তাসহ সেখানে ডিউটিরত সকল পাকসেনা নিহত হয়। একই দিনে পরপর দুটি সফল অভিযান সম্পন্ন করে এ গেরিলা দলটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হয়। পরে দালালদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী বদিকে ধরে অমানুষিক নির্যাতনের পর ৩০শে আগস্ট হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন ও জীবন উৎসর্গ করায় বদিউল আলম বদিকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড