You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.05 | বনখিৰ্দ্দা যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) - সংগ্রামের নোটবুক

বনখিৰ্দ্দা যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ)

বনখিৰ্দ্দা যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ৫ই এপ্রিল। এতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ হন এবং একজন আহত হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৪ঠা এপ্রিল আনুমানিক ২০ সদস্যের পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল যশোর সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে মাগুরা মহকুমা সদর থেকে অগ্রসর হয়। তারা ঝিনাইদহ সদর থানার হাট গোপালপুরের দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে কালীগঞ্জ থানার কোলাবাজারের পাশ দিয়ে বেগবতি নদী পার হয়। সেখান থেকে তারা দক্ষিণে বৃহৎ এক বটগাছের পাশ দিয়ে মালিয়াট-মনোহরপুর মাঠের পশ্চিম-দক্ষিণে খেজুরবাগানে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
পাকসেনাদের আগমনের খবর পেয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে স্থানীয় মুজাহিদ ও প্রতিরোধযোদ্ধারা তাদের গতিরোধ করে। মুজাহিদ ও প্রতিরোধযোদ্ধারা হলেন- মুজাহিদ আজগর আলী (পিতা আহাদ শেখ, মনোহরপুর), বাকের আলী (পিতা জবেদ আলী মৃধা, মনোহরপুর), আবুল কাশেম নালা (পিতা হাজের আলী বিশ্বাস, বাদুরগাছা), মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পিতা মহির উদ্দীন, পুকুরিয়া, বাঘারপাড়া, যশোর), শামছুল ইসলাম (পিতা নওয়াব আলী মৃধা, মনোহরপুর), আব্দুল মজিদ (পিতা ভোলা মোল্লা, মনোহরপুর), আরশেদ আলী (পিতা কোরবান মোল্লা, মনোহরপুর), হারান বিশ্বাস (পিতা ভোলাই বিশ্বাস, বেথুলী), জুব্বার তরফদার (পিতা মানিক তরফদার, বেথুলী), আয়নাল হোসেন (পিতা মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস, মালিয়াট), আব্দুল ওয়াহাব (পিতা সামাদ মণ্ডল, মালিয়াট), তৈয়ব আলী (পিতা জয়নাল খলিফা, মালিয়াট), আব্দুর রশীদ (পিতা চাঁদ আলী শেখ, মালিয়াট), আবুল হোসেন (পিতা ছবেদ আলী, দিঘারপাড়া), মকবুল হোসেন (পিতা শুকুর তরফদার, পাঁচকাহুনিয়া; বিমান বাহিনীর ক্লার্ক) প্রমুখ। পাকসেনারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সারারাত সেখানে অবস্থান করে।
পাকসেনাদের এ দলটি রাতে মাঝেমাঝে গুলিবর্ষণ করত। মুজাহিদ ও মুক্তিযোদ্ধারা সারারাত মাঠের মধ্যে অবস্থান করেন। সকালে তাঁরা পাকসেনাদের কোনো সাড়া না পেয়ে আস্তে-আস্তে খেজুরবাগানের দিকে অগ্রসর হন। তাঁরা সেখানে বুটের ছাপ ও খেজুরগাছের পাতা পোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। পাকিস্তানি সেনাদলটি মুক্তিযোদ্ধাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতেই পশ্চিম দিকের চিত্রানদী পার হয়ে বনখিদা ও ভাটাডাঙ্গা গ্রামের পশ্চিম মাঠে চারাতলায় (ছোটবটগাছ) অবস্থান নেয়। এর আগে যশোর কোতোয়ালি থানার গোবরা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল পাকসেনাদের খেজুরবাগানে অবস্থানের খবর পেয়ে মালিয়াট গ্রামের পূর্বদিক পর্যন্ত অগ্রসর হয়। কিন্তু পথিমধ্যে পাকসেনাদের ঐ স্থান ত্যাগ করার খবর পেয়ে তাঁরা ফিরে যান।
পাকিস্তানি সেনাদলটি বনখিৰ্দ্দা মাঠে অবস্থান করছে জানতে পেরে ৫ই এপ্রিল স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত বাহিনীর একটি দল উক্ত মাঠের উত্তরে সিংগী ও গোমরাইল গ্রামের দক্ষিণে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয়। অপর একটি দল মাঠের পূর্বদিকে বনখিদা ও ভাটাডাঙ্গায় অবস্থান নিয়ে দুদিক থেকে একযোগে পাকিস্তানি সেনাদলকে আক্রমণ করে। উভয় পক্ষে দীর্ঘক্ষণ ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে আবুল কাশেম (পিতা আতর আলী, ষাটবাড়ীয়া) ও আফসার উদ্দিন বিশ্বাস (পিতা মনির উদ্দীন বিশ্বাস, বলিদাপাড়া) নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী (পিতা মজিবর রহমান, হেলাই) গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পাকিস্তানি সেনাদের এ দলটি সারাদিন মাঠের মধ্যে অবস্থান করে সন্ধ্যার পর কোনো এক সময় পশ্চিম- দক্ষিণে দয়াপুর-ভাতঘরা গ্রামের মধ্য দিয়ে পশ্চিমের পাকা রাস্তা ধরে যশোর সোননিবাসের দিকে পালিয়ে যায়। [মো. জুলফিকার আলী ভূট্টো]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড