বড়ালিয়া অপারেশন (লক্ষ্মীপুর সদর)
বড়ালিয়া অপারেশন (লক্ষ্মীপুর সদর) পরিচালিত হয় ২৭শে নভেম্বর। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাধীন ও জেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত বড়ালিয়া গ্রামে এলাকার কুখ্যাত রাজাকার প্রধান ননী চেয়ারম্যানের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা এ আক্রমণ পরিচালনা করেন। আক্রমণে ননী চেয়ারম্যানসহ ৮৫ জন রাজাকার নিহত হয়।
জেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে মান্দারী ইউনিয়নের মান্দারী বাজারের অবস্থান। এ বাজারের বড় মসজিদের পাশে রাজাকারদের একটি শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্পের রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল বটতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুখ্যাত দালাল আবদুল জলিল ওরফে ননী চেয়ারম্যান। সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তায় হত্যা, গণহত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তখন ননী চেয়ারম্যান এতই প্রভাবশালী ছিল যে, সব সময় ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুলসংখ্যক রাজাকার ও পাকিস্তানি মিলিশিয়া পুলিশ তাকে পাহারা দিত।
মুক্তিযোদ্ধারা ননী চেয়ারম্যানের ওপর আক্রমণ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার লুৎফর রহমানের নির্দেশে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ওয়ালী উল্যা, আ ও ম সফি উল্যা, নুরের জামান, ছিদ্দিক উল্যা, জয়নাল আবেদিন, কাজী বাহার উদ্দিন, মফিজ উল্যা, আবদুল মান্নান, মনিরুজ্জামান, হাবিলদার আবদুল ওদুদ প্রমুখের সমন্বয়ে মান্দারী বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। পোদ্দার বাজার, নন্দীগ্রাম, সাহাপুর, সোমপাড়া ও গোপালপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এতে অংশ নেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু ২৭শে নভেম্বর ননী চেয়ারম্যান তার দলবল নিয়ে মান্দারী বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বড়ালিয়া (বরপাড়া) গ্রামের গোলগার হিন্দু বাড়িতে এক বিশাল করই গাছ কাটতে ও লুটপাট করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে তার ওপর আক্রমণ করেন। সুবেদার ওয়ালি উল্যাহ, বীর বিক্রম তাঁর দল নিয়ে ননী চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গী রাজাকারদের ঘিরে ফেলেন। রাজাকাররা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে ননী চেয়ারম্যানসহ ৮৫ জন রাজাকার নিহত হয়। ননী চেয়ারম্যানের নিহত হওয়ার সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর শতশত মানুষ আনন্দ মিছিল করে। বিক্ষুব্ধ মানুষ জুতা ও ঝাড়ু মেরে তার প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে। সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা মান্দারী বাজার রাজাকার ক্যাম্প দখল করেন। বহু রাজাকার পালিয়ে লক্ষ্মীপুরের দিকে চলে যায়। [মো. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড