You dont have javascript enabled! Please enable it!

কোঠা দরগাবাড়ি গণহত্যা (উজিরপুর, বরিশাল)

বড়াকোঠা দরগাবাড়ি গণহত্যা (উজিরপুর, বরিশাল) সংঘটিত হয় ১৭ই অক্টোবর। এতে শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিমি পশ্চিমে বড়াকোঠা ইউনিয়ন। ৯নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাজাহান ওমরের নেতৃত্বে ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ ৭ই সেপ্টেম্বর উপজেলার বড়াকোঠার দরগাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টস স্থাপন করে। এখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২৬টি থানায় যুদ্ধ পরিচালনা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। ১৭ই অক্টোবর ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার ও আলবদর দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড়াকোঠা দরগাবাড়ি সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টস আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর আগমন টের পেয়ে সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্তুতি না থাকায় পিছু হটেন। মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে তাঁদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী হাওলাদার বাড়ি, দরগাবাড়ি ও সরদার বাড়িতে গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালায়। হানাদার বাহিনীর হাতে সেদিন শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। বড়াকোঠায় পাকবাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের কারণে স্বাধীনতার পরে অনেক বছর এ ইউনিয়নকে ‘পোড়াকোঠা’ বলা হতো। দরগাবাড়ি গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে ৫০ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- আবদুল খালেক মাস্টার (৪৫) (পিতা জেন্নাত আলী, বড়াকোঠা; শিক্ষক), মো. জামাল হোসেন (১৮) (পিতা মৌলভী আবুল কাসেম, উত্তর বড়াকোঠা; ছাত্র), মানিক মিয়া ওরফে হাফিজ উদ্দিন মিয়া (৪০) (পিতা মোন্তেজ মিয়া, বড়াকোঠা), বেল্লাত আলী খাঁ (২৫) (পিতা আ. হাকিম খাঁ, উত্তর বড়াকোঠা; শ্রমিক), আদম আলী মল্লিক (৩০) (পিতা কাজেম মল্লিক, উত্তর বড়াকোঠা), আ. মাজেদ (৬০) (পিতা বাছের মল্লিক, উত্তর বড়াকোঠা), নেয়াল উদ্দিন (৬০) (পিতা করিম উদ্দিন, উত্তর বড়াকোঠা), আবদুল মতিন (২৫) (পিতা নেয়াল উদ্দিন, উত্তর বড়াকোঠা), ওয়াজেদ বেপারী (৫০) (পিতা বাবর আলী বেপারী, উত্তর বড়াকোঠা), মফছের আলী বেপারী (৪৫) (পিতা বাবর আলী বেপারী), লালু হাওলাদার (৪০) (পিতা আকুব্বর হাওলাদার, উত্তর বড়াকোঠা), সৈয়দ আলী বেপারী (৬০) (উত্তর বড়াকোঠা), সেকেল উদ্দিন হাওলাদার (৬০) (পিতা আহম্মদ হাওলাদার, বড়াকোঠা), মোক্তার বেপারী (৫০) (পিতা সৈয়দ আলী বেপারী, বড়াকোঠা), গোলাম মোস্তফা (৭) (পিতা সৈয়দ আলী, বড়াকোঠা), নুরুল হক (১৭) (পিতা কাসেম মৌলভি, বড়াকোঠা), ওয়াজেদ আলী সরদার (৪৫) (পিতা উজ্জত আলী, বড়াকোঠা), মাখন লাল হালদার (৫০) (পিতা শরৎ হালদার, বড়াকোঠা), আব্দুল জব্বার (২৫) (পিতা উজ্জত আলী, বড়াকোঠা), অমূল্য হালদার (২৮) (পিতা শরৎ চন্দ্র হালদার, বড়াকোঠা), জ্যোৎসনা (২) (পিতা হরেন বাড়ৈ, বড়াকোঠা), সৈজউদ্দিন বেপারী (৭০) (পিতা সংশয় উদ্দিন বেপারী, উত্তর বড়াকোঠা), হাসেম (৩৫) (পিতা মমিন উদ্দিন, উত্তর বড়াকোঠা; বাক প্রতিবন্ধী), ভাসাই (১৮) (পিতা সৈজউদ্দিন বেপারী, উত্তর বড়াকোঠা), ছত্তার বেপারী (২৪) (পিতা ছবেদ আলী বেপারী, উত্তর বড়াকোঠা), লালু মল্লিক (৬০) (পিতা গফুর উদ্দিন মল্লিক, উত্তর বড়াকোঠা), উপেন বিশ্বাস (৬০) (পিতা মধুসূদন বিশ্বাস, উত্তর বড়াকোঠা), রাম কৃষ্ণ হালদার (৪৫) (পিতা রাইচরণ সাধু, উত্তর বড়াকোঠা), ধলু শিল (২৫) (পিতা অনন্ত শীল, উত্তর বড়াকোঠা), আনার কলি (৭) (পিতা আবু তালেব মাস্টার, দক্ষিণ বড়াকোঠা), মহেন্দ্র হালদার (৫০) (পিতা কালীচরণ হালদার, বড়াকোঠা), আবদুল হক (২৫) (পিতা কাসেম আলী মুন্সি, বড়াকোঠা), তোরাপ আলী হাওলাদার (৪৫) (পিতা আইজউদ্দিন, বড়াকোঠা), রাজে আলী হাওলাদার (৬০) (পিতা আমুদ আলী, বড়াকোঠা), কাদের দফাদার (৫০) (পিতা কালু মহাজন, গাজীরপাড়), আবদুল বেপারী (৬০) (পিতা ইমাম উদ্দিন বেপারী, গাজীরপাড়), মজিদ রাঢ়ী (৩৫) (গাজীরপাড়), লেহাজ হাওলাদার (৫০) (পিতা মইজউদ্দিন, গাজীরপাড়), হাজেরা বেগম (৩৫) (স্বামী আদেল উদ্দিন রাঢ়ী, গাজীরপাড়), রশিদ সিকদার (গাজীরপাড়), সোবাহান সিকদার (গাজীরপাড়), হাসেম আলী ঘরামী (৩৫) (পিতা মেছের ঘরামী, লস্করপুর), তারক হালদার (৬০) (পিতা লাল মোহন হালদার, খাটিয়ালপাড়া), ইসমাইল খান (৪০) (পিতা মেহের খান, খাটিয়ালপাড়া), কার্তিক চন্দ্র হাওলাদার (৩১) (পিতা রামচন্দ্র হাওলাদার, মালিকান্দা), যশোমতি (৩২) (স্বামী নিশিকান্ত হালদার, মালিকান্দা), সফিজ উদ্দিন ফকির (২৫) (পিতা গফুর ফকির, ধামুরা), আরজ আলী হাওলাদার (৬০) (পিতা আব্দুল হাওলাদার, দক্ষিণ ধামুরা), আব্দুস ছালাম ঢালী (৬০) (পিতা মব্বত আলী ঢালী, দক্ষিণ ধামুরা), ইসরাইল সরদার (৫০) (পিতা তুজুমব্বর সরদার, দক্ষিণ ধামুরা) ও নাজেম হাওলাদার (৩৫) (পিতা আনোয়ার উদ্দিন, দক্ষিণ, ধামুরা)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!