You dont have javascript enabled! Please enable it!

বদরগঞ্জ যুদ্ধ (বদরগঞ্জ, রংপুর)

বদরগঞ্জ যুদ্ধ (বদরগঞ্জ, রংপুর) ৯ই এপ্রিল সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ- যুদ্ধে হানাদাররা বদরগঞ্জ বাজার দখল করে নেয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ জনসহ ৪ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং কমান্ডার ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন আহত হন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাঙালি-বিহারি সংঘর্ষ শুরু হয়। পার্বতীপুর, সৈয়দপুর ও রংপুর শহরে বিহারিদের সঙ্গে বাঙালিদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এসব এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বিহারিদের অত্যাচারে অসহায় বাঙালিদের অনেকে বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ার বিলে আশ্রয় নেয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে রংপুর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল বদরগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করে অবাঙালি বিহারিদের সঙ্গে শলাপরমর্শ করে। তারা বদরগঞ্জ শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় বদরগঞ্জ বাজার পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে ছাত্রনেতা মাহবুবার রহমান হাবলু বদরগঞ্জ থেকে ফুলবাড়ি গিয়ে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বদরগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
৩১শে মার্চ রাতে সৈয়দপুরে পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন ও সুবেদার সহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বেশকিছু বাঙালি সৈনিক পার্বতীপুর খোলাহাটি রেলওয়ে ইয়ার্ডে অবস্থান নেন। ২রা এপ্রিল বদরগঞ্জ থানার সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ খোলাহাটিতে বাঙালি সৈনিকদের অবস্থানের কথা জানতে পেরে তাঁদের বদরগঞ্জে নিয়ে আসেন। বাঙালি সৈনিকরা বদরগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর অনুপ্রবেশ রুখতে যমুনেশ্বরী নদীর তীরে মেলার ডাঙ্গায় বাংকার তৈরি করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ২-১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত বদরগঞ্জকে হানাদারমুক্ত রাখেন। তাঁরা রেললাইন তুলে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। বাঙালি সৈনিকদের বদরগঞ্জে প্রবেশের সংবাদে অবাঙালি বিহারিদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের নিরাপত্তা চায়। ৫ই এপ্রিল সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে অবাঙালি বিহারিদের সংঘর্ষে ৪০-৫০ জন অবাঙালি নিহত হয়। এরপর থেকে বদরগঞ্জে পাকিস্তানি সৈন্যদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল রংপুর থেকে বদরগঞ্জের দিকে রওনা করে। তারা যমুনেশ্বরী নদীর পূর্বতীরে অবস্থান নেয়। ৯ই এপ্রিল হঠাৎ করে হানাদার বাহিনী বদরগঞ্জ বাজারে গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। ফলে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ বেঁধে যায়। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী-র সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে গোপনে তাদের যমুনেশ্বরী নদী পাড় করে বদরগঞ্জ বন্দরে প্রবেশে সহায়তা করে। ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন এবং সুবেদার সহিদুল ইসলামের বাহিনী পেছন দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি হানাদারদের ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পেরে ওঠেননি। হানাদার বাহিনী বদরগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে। যুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ জন সদস্যসহ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে থাকা ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন বাম কাঁধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। যুদ্ধের পর ইসলামি ছাত্র সংঘের নেতা (স্বাধীনতার পরে এক সময় জামায়াতের আমীর, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত) এ টি এম আজহারুল ইসলামের সহযোগিতায় স্বাধীনতাবিরোধীরা বদরগঞ্জ শহরে জগদীশ প্রসাদের বাড়িটি দখল করে শান্তি কমিটির অফিস এবং রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল টেডি মাওলানা নুরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে বদরগঞ্জ থানার বিভিন্ন গ্রাম-পাড়ায় আক্রমণ, নারীধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে। [মো. মেছের উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!