You dont have javascript enabled! Please enable it!

বড়বাম যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা)

বড়বাম যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ২৯শে এপ্রিল। আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধ হয়। এতে ১৫- ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২ জন শিশুসহ গ্রামের ৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং ৮- ১০ জন আহত হয়।
ভারতের কাঁঠালিয়া প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অবস্থানকালে লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলমের নির্দেশে চাঁদপুর-নোয়াখালী সড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং যোগাযোগ বিছিন্ন করার জন্য নুরুল ইসলাম (সাবেক কমিশনার)-সহ মুক্তিবাহিনীর ৩১ সদস্যের একটি দল ২৮শে এপ্রিল রাতে বড়বাম মাদ্রাসা ও গ্রামের কিছু বিশ্বস্ত বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মাদ্রাসার এক শিক্ষকের মাধ্যমে আজগরা গ্রামের রাজাকার কমান্ডার শামসুল হক তা জানতে পারে। রাতেই সে লাকসাম থ্রি-এ সিগারেট ফ্যাক্টরি আর্মি ক্যাম্পে এ খবর জানায়। পরদিন সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি আর্মির এক বিশাল বাহিনী তিন দিক থেকে বড়বাম গ্রাম ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেদের স্বল্প অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। পাকিস্তানি সৈন্যরা নরপাটি গ্রাম থেকে তাঁতিপাড়া হয়ে বড়বাম গ্রামের উত্তর পাশ থেকে আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধারাও দক্ষিণ দিক থেকে মাস্টার ওসমান গণির বাড়িতে পজিশন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। উভয় পক্ষের গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দে গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাঠের কৃষকরা তাদের কাজ ও হালের গরু-লাঙ্গল-জোয়াল ফেলে জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে পালাতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রায় ৩-৪ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের বিশাল বহর ও ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে নিজেদের কিছু অস্ত্র পুকুরে ফেলেন, কিছু অস্ত্র গ্রামের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখে বড়বাম গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। এ-যুদ্ধে ১৫-২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২ জন শিশুসহ গ্রামের ৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং ৮-১০ জন আহত হয়। নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শুধু চৌয়ারা গ্রামের আবুল কাশেমের পরিচয় জানা গেছে। বড়বাম গ্রামের নিহতরা হলেন- আবু হানিফা (১৮), আলেয়া আকতার (৫) ও নুরুননাহার (৬)। আহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- পেয়ারা বেগম (পায়ে বুলেট বিদ্ধ), আরফাতুন্নেসা (নিহত আলেয়া আকতারের মাতা; বাচ্চা কোলে অবস্থায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয় এবং গুলি বুকের একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়), রোকেয়া বেগম (গালের এক পাশ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়) ও মৌলবি আজিমউদ্দিন। যুদ্ধশেষ পাকবাহিনী স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রামে ঢুকে অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে গ্রামবাসীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও লুণ্ঠন চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। [ইমন সালাউদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!