You dont have javascript enabled! Please enable it!

বড়মাছুয়া গণহত্যা (মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর)

বড়মাছুয়া গণহত্যা (মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর) ৮ই জুন এবং ১২ই জুন দুদফায় সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। কয়েকজন নারী তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন।
বড়মাছুয়া মঠবাড়িয়া উপজেলার একটি বড় গ্রাম। হিন্দু- মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের বসবাস এ গ্রামে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক। উপজেলা শান্তি কমিটির সভাপতি খান সাহেব হাতেম আলী ও -রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আবদুস সামাদ তালুকদার ও মোসলেম আলীর নির্দেশে হানাদার বাহিনী এ গ্রামের নিরীহ মানুষের ওপর দুদফায় আক্রমণ চালায়। ৮ই জুন রাজাকার বাহিনীর ৭-৮ জন সদস্যের দেখানো পথে হানাদার বাহিনী এ গ্রামে প্রবেশ করে। তারা কুদ্দুস আকনের বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধের সামনের বাড়িঘর আক্রমণ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে গ্রামের মানুষজন ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। তারা এলাকার ৭ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা বাড়িঘরে লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগে মেতে ওঠে। গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ করার পূর্বেই তারা পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১২ই জুন পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় দক্ষিণ বড়মাছুয়া পলোহান বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশের ঘরবাড়িতে আকস্মিক হামলা চালায়। তারা সেখানে ৭ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এ-সময় গ্রামের কয়েকজন নারী তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। বড়মাছুয়া গণহত্যায় শহীদ গ্রামবাসীরা হলেন- বড়মাছুয়া গ্রামের হরেন্দ্রনাথ বৈরাগী (পিতা ভোলানাথ বৈরাগী), অশ্বিনী কুমার বেপারী (পিতা আদিত্য কুমার বেপারী), রাখাল মিস্ত্রী (পিতা হরেন্দ্র নাথ মিস্ত্রী), উপেন হাওলাদার (পিতা ইন্দ্র কুমার হাওলাদার), রবীন্দ্র নাথ বৈরাগী (পিতা দারিকা নাথ বৈরাগী), রাজেন্দ্র নাথ কুলু (পিতা অনিল কুলু), ধীরেন কুলু (পিতা অনিল কুলু), মো. আমির হোসেন (পিতা এন্তাজ উদ্দিন হাওলাদার), নূর মোহাম্মাদ (পিতা এন্তাজ উদ্দিন হাওলাদার), ধীরেন্দ্র নাথ রায় (পিতা শরৎ চন্দ্র রায়), উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস (পিতা হরিচরণ বিশ্বাস), সুরেশ চন্দ্র সরকার (পিতা সতীশ চন্দ্ৰ সরকার), ভূপেন্দ্র নাথ হালদার (পিতা বিপিন বিহারী হালদার) ও নারায়ণ মাস্টার (পিতা মথুরানাথ)। এ গণহত্যায় হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে অংশ নেয় রাজাকার কাশেম, এসকান্দার মৃধা, হাসেম মোল্লা, আলম মৃধা প্রমুখ। [মো. মাসুদুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!