You dont have javascript enabled! Please enable it! বড় রেলওয়ে স্টেশন বধ্যভূমি (চাঁদপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

বড় রেলওয়ে স্টেশন বধ্যভূমি (চাঁদপুর সদর)

বড় রেলওয়ে স্টেশন বধ্যভূমি (চাঁদপুর সদর) চাঁদপুর শহরের বৃহৎ বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধকালে এ বধ্যভূমিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে।
৮ই এপ্রিল সন্ধ্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চাঁদপুর শহরে অনুপ্রবেশ করে প্রথমে টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরের দিন তারা বড় স্টেশনের রেলওয়ে বিশ্রামাগার, রেলওয়ে থানা ও রেলওয়ে ডাকবাংলো দখল করে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তারা নূরিয়া হাইস্কুল, আক্কাস আলী হাইস্কুল, বে শিপিং কর্পোরেশন, ওয়াপদা রেস্ট হাউস, পুরান বাজার পুলিশ ফাঁড়ি এবং পৌরসভার দাতব্য চিকিৎসালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধকালে চাঁদপুরকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৯তম ডিভিশনের হেডকোয়ার্টার্স ঘোষণা করা হয়। এর অধিনায়ক ছিল মেজর জেনারেল রহিম খান। হানাদার বাহিনীর এ সকল ক্যাম্পকে তারা বধ্যভূমিতে পরিণত করে। এর মধ্যে চাঁদপুর শহরের মেঘনা নদীর পাড় বড় রেলওয়ে স্টেশন এলাকাটি ছিল বৃহৎ একটি বধ্যভূমি। পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা মিলে এখানকার অফিস ও রেস্টহাউসগুলোকে নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। স্টেশনের ওয়েটিং রুমগুলো ছিল মৃত্যুপুরী। মুক্তিযুদ্ধকালে এটি কসাইখানা নামে পরিচিতি লাভ করে। রাজাকার শান্তি কমিটি, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় হানাদাররা ৫ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর ছত্রছায়ায় তাদের স্থানীয় দোসররা হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে মেতে ওঠে। তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোরঞ্জনের জন্য নিয়মিত বাঙালি নারীদের ক্যাম্পে সরবরাহ করত। পাশবিক নির্যাতনের পর এ সকল নারী তাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার ও রেলগাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে যারা চাঁদপুর আসত, সন্দেহ হলে তাদের এবং জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ও নারীদের ধরে এনে এ নির্যাতনকেন্দ্রে অমানুষিক নির্যাতন করত। তারা ধরে আনা এ সকল মানুষদের নির্মমভাবে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে গায়ে সিগারেটের আগুন লাগিয়ে দিত, হাত-পা বেঁধে রেলওয়ের ওয়াগনের মধ্যে দু-চার দিন আবদ্ধ করে রাখত। এরপরেও মারা না গেলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নদীর মধ্যে ফেলে দিত। অনেক সময় নদীর পাড়ে কিংবা পানিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত। এখান থেকে লাশ সরাতে রেলওয়ের ডোম ছনুয়া ও গয়া প্রসাদকে তারা বাধ্য করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হত্যার পর তারা শহীদদের লাশগুলো মেঘনা নদীতে ফেলে দিত। এ বধ্যভূমিতে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে অসংখ্য বাঙালির লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড