You dont have javascript enabled! Please enable it!

বড়খাতা ব্রিজ অপারেশন (হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট)

বড়খাতা ব্রিজ অপারেশন (হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট) পরিচালিত হয় ১২ই আগস্ট। এ অপারেশনে ব্রিজটি ধ্বংস এবং ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ অপারেশন সফল হওয়ায় হাতীবান্ধা থানায় মুক্ত এলাকা সম্প্রসারিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হাতীবান্ধা থানা ৬ নম্বর সেক্টরের পাটগ্রাম সাব-সেক্টরের আওতাধীন ছিল। হাতীবান্ধায় হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের একটি বড় ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্প থেকে তারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালাত। হাতীবান্ধার বড়খাতা রেল স্টেশনের কাছে সানিয়াজান নদীর ওপর একটি রেল ব্রিজ ছিল। এ ব্রিজ বড়খাতা পুল নামে পরিচিত ছিল। কৌশলগত দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে এ ব্রিজ রক্ষার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। তারা ব্রিজ রক্ষার জন্য সেনাসদস্য, ইউপিসিএএফ ও রাজাকারদের সমন্বয়ে ১ কোম্পানির অধিক সৈন্য নিয়োগ করে। তারা ব্রিজ রক্ষায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পাহারা দিত। এছাড়া তারা হাতীবান্ধা কলেজ, সিও (ডেভ) কার্যালয় ও তিস্তা নদীর পাড় পর্যন্ত টহল দিত, যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের যে-কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারাও এ ব্রিজ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্রিজ ধ্বংস হলে হাতীবান্ধার দিক দিয়ে রংপুরের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ এবং বড়খাতাসহ হাতীবান্ধার ২২ কিলোমিটার এলাকা মুক্ত এলাকায় পরিণত হবে।
৬ নম্বর সেক্টরের উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশার বড়খাতা ব্রিজ অপারেশনের জন্য মে মাসের প্রথম দিকে একটি কমান্ডো গ্রুপ পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা ব্রিজের ওপর, নিচ ও আশপাশের বিরাট এলাকা জুড়ে অবস্থান নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ব্রিজের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ৪ঠা আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি গ্রুপ পাঠানো হলে পরিস্থিতি একই রকম হওয়ায় তাঁরাও ফিরে আসেন। ১২ই আগস্ট সাব-সেক্টর কমান্ডার মতিউর রহমান, বীর বিক্রম ও কোম্পানি কমান্ডার হারেসউদ্দিন সরকার, বীর প্রতীকএর নেতৃত্বে আফজাল হোসেন (পরে শহীদ), নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, শওকত আলীসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ১২ সদস্যর একটি দলকে বড়খাতা ব্রিজ অপারেশনে পাঠানো হয়। এ দলের সদস্যরা রাতে মুক্ত এলাকার ভেতর দিয়ে তিন কিলোমিটার পথ জিপ চালিয়ে ও পরে পায়ে হেঁটে ব্রিজের কাছে যান। সে রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রবল বৃষ্টির কারণে ব্রিজ এলাকার পাকিস্তানি সেনারা বাংকারে ঢুকে পড়ে। রাজাকারসহ অন্যরা বৃষ্টির কারণে দূরে সরে যায়। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা রাত দেড়টার দিকে ব্রিজের দুই পাড়ে পৌঁছে যান। তাঁরা ব্রিজের দুই মুখ ও মাঝাখানে এক্সপ্লোসিভ স্থাপন করেন। লে. মেজবাহউদ্দিন (পরে বীর বিক্রম) ও সুবেদার আব্দুল মালেক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ২টি কোম্পানি তাঁদের পেছন থেকে কাভার দেয়। এক্সপ্লোসিভ স্থাপন করার পর আধঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে সরে যান। রাত ২টায় ডেটনেটরে আগুন ধরিয়ে বড়খাতা রেল ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়া হয়। এ-সময় পাকিস্তানি সেনারা বাংকার থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির মুখে তারা পালাতে ব্যর্থ হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপিত বিস্ফোরকে ব্রিজটি ধ্বংস হয়। এ অপারেশন সফল হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং মুক্ত এলাকা সম্প্রসারিত হয়। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!