বীর প্রতীক বজলু মিয়া
বজলু মিয়া, বীর প্রতীক (১৯৫২-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালে কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার আমড়াতলী ইউনিয়নের বানশুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ওসমান আলী এবং মাতার নাম কুলসুম আক্তার। তিনি বানশুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
বজলু মিয়া ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সিপাহি পদে যোগদান করেন। তিনি শৈশব থেকে স্বাধীনচেতা ও সাহসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের শুরুতে বজলু মিয়া ছুটিতে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে সারাদেশে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চলছিল। মার্চের শুরুতে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে বজলু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। শুরুতে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র পরিচালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক ছাত্র-তরুণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ প্রদানের পর বজলু মিয়া একাধিক প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় তিনি চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন এবং অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকে ফিরে ২নং ও ৪নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বজলু মিয়া ও তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথবাহিনীর সৈন্যদের সঙ্গে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছার জন্য নারায়ণগঞ্জের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে অবস্থান নেন। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে তখন পাকবাহিনীর শক্ত প্রতিরোধ ঘাঁটি ছিল। মুক্তিবাহিনী ও যৌথবাহিনী পাকসেনাদের এ ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করলে এখানে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে অকুতোভয় বজলু মিয়া পাকসেনাদের প্রতিরক্ষাব্যূহের মধ্যে ঢুকে পড়েন। সঙ্গে-সঙ্গে শত্রুদের এক ঝাঁক গুলি তাঁর বুকে বিদ্ধ হয়। তিনি ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার বজলু মিয়াকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। ব্যক্তি জীবনে বজলু মিয়া এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম করফুল নেছা (মৃত্যু ১৯৭৫)। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড