You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গসোনাহাট যুদ্ধ (ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম)

বঙ্গসোনাহাট যুদ্ধ (ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম) কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার বঙ্গসোনাহাটে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেসব যুদ্ধের একটিতে ৪০ জন পাকসেনা নিহত ও অনেকে আহত হয় এবং অপর একটি যুদ্ধে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর সোনাহাট হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এ এলাকার সীমান্ত চৌকিতে আনিস মোল্লার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অবাঙালি ইপিআরদের আক্রমণ করেন। ২৫শে মার্চের পর একদিন দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গসোনাহাট বিওপি আক্রমণ করেন। তখন ক্যাম্পে একজন অবাঙালি ইপিআর ছিল। হাবিলদার আনিস মোল্লা বিওপিতে প্রবেশ করে অবাঙালি ইপিআর-কে লক্ষ করে স্টেনগানের গুলি করলে সে নিহত হয়। সোনাহাট বিওপি ক্যাম্পের অবাঙালি ইপিআর সদস্যদের বিতাড়নের “পর ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়ে এক বিরাট মুক্তাঞ্চল গড়ে ওঠে। এ মুক্ত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন ও যুবশিবির প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৪ই এপ্রিল ভারতের বিএসএফ ক্যাপ্টেন রবি ভারতের পানবাড়ি থেকে ২টি দুই ইঞ্চি মর্টার, ৩টি এলএমজি, ৪ বাক্স গ্রেনেড ও ১১৭টি থ্রি- নট-থ্রি রাইফেল রহিম উদ্দিন মণ্ডলের কাছে হস্তান্তর করেন। এ প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনায় রহিম উদ্দিন মণ্ডল, আলাউদ্দিন মণ্ডল, শাহাবাজ উদ্দিন মণ্ডল, ইব্রাহিম আলী, আব্দুল গফুর জয়নাল আবেদীন প্রমুখ যুক্ত ছিলেন।
ধরলা নদীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারীর দিকে অগ্রসর হওয়ার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা ও মুক্তাঞ্চল ধরে রাখার স্বার্থে ২৮শে মে বিএসএফ-এর সহযোগিতায় বঙ্গসোনাহাট রেলওয়ে ব্রিজের দুটি গার্ডার উড়িয়ে দেন। এ অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস নান্নু, আমজাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বিএসএফ সদস্য সহযোগিতা করেন। এ অপারেশন সফল হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে দুধকুমার নদী অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। সোনাহাট ব্রিজের উভয় পাশে অবস্থান নিয়ে মুক্তিবাহিনীর দুটি কোম্পানি আন্ধারীরঝাড় ও জয়মনিরহাট সড়কে মাইন পুঁতে রাখত এবং গেরিলা অপারেশন চালাত। ভারতীয় ক্যাপ্টেন এস কে সিং-এর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনীর এফএফ কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুস নান্নুর নেতৃত্বে দুধকুমর নদীর ওপর নির্মিত সোনাহাট ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে নান্নু নিজে এবং পূর্ব পাড়ে আমজাদ হোসেন সরকার ও অন্যরা অবস্থান নেন। পাকিস্তানিরা সোনাহাটে প্রবেশের চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সোনাহাট ব্রিজের পাড়ে তীব্র যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ১০০ মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এখানে মুক্তিবাহিনীর মহসীন আলী (নাজিম খাঁ), আব্দুল আজিজ (রাজারহাট) ও মকবুল হোসেন (পাটগ্রাম)-সহ ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন সরকার (টগরাইহাট)-সহ বেশ কয়েকজন। অপরদিকে পাকবাহিনীর ৩০০ সৈন্যের ৪০ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়।
ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের নির্দেশে ২৩শে জুন সকালে সোনাহাট পাটেশ্বরীতে অবস্থিত পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন।
৮ই আগস্ট পাকিস্তানিরা পুনরায় সোনাহাট ব্রিজ দখলের চেষ্টা করে। ৭ই আগস্ট রাতেই মুক্তিযোদ্ধারা দুধকুমার নদী অতিক্রম করে পাটেশ্বরী রেলস্টেশনের পূর্বের পাকা রাস্তায়, রেল লাইনের উত্তর-দক্ষিণে, উত্তর পাশের খালে ও বাঁশঝাড়ের আশে-পাশে অবস্থান নেন। পরদিন সকাল ১১টায় ৩০ জন পাকসেনা রেললাইন ধরে পূর্বদিকে অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি-র গুলিবর্ষণ করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা পাল্টা জবাব দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। একজন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়লেও পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। অন্যদিকে পাকিস্তানিদের ৩ জন সৈন্য ব্রিজের নিচে পানিতে পড়ে মারা যায়। এ-যুদ্ধের পর পাকিস্তানিরা ব্রিজ অতিক্রম করে সোনাহাট দখল করতে ব্যর্থ হয়। [এস এম হারুন অর রশীদ লাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!