You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক বজলুল মাহমুদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক বজলুল মাহমুদ

বজলুল মাহমুদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুন-এর সদস্য এবং একাধিক অপারেশনে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৫২ সালের ১৪ই জুলাই কুমিল্লা শহরের মৌলভীপাড়ার নানাবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এ এস ইসমাইল এবং মাতার নাম মাহমুদা বেগম। জন্মের কিছুদিন পর তিনি ঢাকার ধানমন্ডিস্থ পিত্রালয়ে চলে আসেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকার ওয়েস্টার্ন হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র ছিলেন।
বজলুল মাহমুদ ২৫শে মার্চ রাতের ভয়াবহতা ও নির্যাতন দেখে পাকহানাদার বাহিনীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হন। এর পূর্বে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে আরো বেশি উজ্জীবিত করে। তিনি ৭১-এর ২রা জুন তাঁর বন্ধু কুটুর সঙ্গে ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে ভারতীয় বর্ডার পার হয়ে আগরতলার মেলাঘর ক্যাম্পে যান। এ ক্যাম্পে তিনি স্টেনগান, এসএলআর ও ভারী অস্ত্রপাতি চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ ছাড়াও গ্রেনেড ছোড়া ও মাইন বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত হন। তাঁর দায়িত্বে যেসব বাসায় মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন, সেসব বাসা হলো- ৭৬নং সেন্ট্রাল রোড (ধানমন্ডি), হাক্কানি মসজিদের রাস্তার দিকে ছোট কামরা (ধানমন্ডি), মেহেরুন্নেসা গার্লস স্কুল সংলগ্ন ভূতের গলির মসজিদের ওয়াকফের একটি টিনের ঘর এবং এসপি খলিলুর রহমানের ওয়েস্টেন্ড স্ট্রিটের বাড়ি – যে বাড়িতে চলচ্চিত্র শিল্পী রাণী সরকার থাকতেন।
বজলুল মাহমুদ ২নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন আব্দুল আজিজ। এ গ্রুপ কমান্ডারের অধীন আনুমানিক সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ছিল। ঢাকা শহরের পার্শ্ববর্তী পলখান গ্রামের গভীর জঙ্গলে এ দলের ক্যাম্প ছিল। তারা গ্রুপ কমান্ডারের নির্দেশে দলে-দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা শহরে অপারেশনের জন্য নিজেদের তৈরি করে রাখতেন। তাঁদের বলা হতো ক্র্যাক প্লাটুন। ২রা আগস্ট রাতে তিনি ও তাঁর দলের সদস্য নিউ মডেল স্কুল, ক্রিসেন্ট রোড, ধানমন্ডিতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে তিনি তাঁর সহযোদ্ধাসহ ক্রিসেন্ট রোডের নিউ মডেল স্কুলে অপারেশনের অংশ হিসেবে ফসফরাস চার্জে আগুন লাগিয়ে দেন এবং তিনদিক থেকে গ্রেনেড চার্জ করেন। এ ক্যাম্প থেকে মিলিশিয়া বাহিনী পালিয়ে যাবার সময় ৭ জন নিহত হয়।
৭১-এর ১৫ই নভেম্বর রাতে পাকহানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ২০ দিন বন্দি করে নানাভাবে নির্যাতন করে এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। প্রচণ্ড নির্যাতন সহ্য করেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কোনো কথা স্বীকার করেননি। ঘটনাক্রমে তিনি পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বজলুল মাহমুদ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তাঁর স্ত্রীর নাম আরজুমান বেগম। এ দম্পতি ২ কন্যা সন্তানের জনক। [জেবউননেছা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড