You dont have javascript enabled! Please enable it!

বটতলী রুস্তমহাট অপারেশন (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম)

বটতলী রুস্তমহাট অপারেশন (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ২৯শে নভেম্বর। এতে ৯ জন রাজাকার নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বটতলীর রাজাকার কমান্ডার টিক্কা খান ও কমান্ডার আহমদ ছফার বাহিনী বটতলী গ্রামস্থ রুস্তমহাটকে কেন্দ্র করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা খুন, লুটপাট, নারীধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের অত্যাচার শুরু করে। এতে পুরো পশ্চিম আনোয়ারার সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে হিন্দু পরিবারগুলোর লোকজনের ওপর অত্যাচারের মাত্রা ছিল বেশি। এ হাটে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনের যাওয়া-আসা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাজাকাররা এতই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, তারা বটতলী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মনির আহমদের বাড়িঘর লুট ও জমির ধান কেটে নেয়। এ খবর পেয়ে বরুমছড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাসেম বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা রশিদ আহমদকে জানান। তিনি ঘটনাটি দ্রুত বিভিন্ন ক্যাম্পে জানিয়ে দিলে মুক্তিযোদ্ধারা বটতলী বাজার (রুস্তমহাট) আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ২৯শে নভেম্বর বিকেলে কমান্ডার আবদুল লতিফ ও কমান্ডার কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিছের নেতৃতে মুক্তিযোদ্ধাদের এক বিশাল বাহিনী রুস্তমহাটে অপারেশন চালান। তারা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিকেলের দিকে পুরো বাজারটি ঘিরে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে রাজাকাররা আত্মগোপন করতে থাকে। রাজাকার কমান্ডার আহমদ ছফা ঐ সময় মাস্টার ফজল হকের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিম সেখানে থেকে তাকে আটক করেন। বাজার ঘেরাও করার শুরুতেই পশ্চিম পার্শ্বে কড়া পাহারায় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিমসহ কয়েকজন। গহিরা ক্যাম্পের ২ জন রাজাকার রিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময় নাসিম তাদের লক্ষ করে গুলি করলে তারা সেখানেই নিহত হয়। রাজাকার কমান্ডার দুইধ্যা ওরফে টিক্কা খান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ অপারেশনে ৭ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। তাদের বারখাইন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর শংখ নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ অপারেশনের কারণে পশ্চিম আনোয়ারার রাজাকার ঘাঁটিগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজাকারদের মনোবল ভেঙে যায়।
রুস্তমহাট অপারেশনে যেসকল মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন, তারা হলেন- হাবিলদার মদন আলী (গুন্দ্বিপ), রশিদ আহমদ (বরুমছড়া), রুস্তম আলী (বারখাইন), মোহাম্মদ নাসিম (বটতলী), মাস্টার আবুল হাসেম (বারখাইন), আবদুর রাজ্জাক (বরুমচড়া), আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাসেম (বরুমচড়া), লোকমান আহমদ শাহ (বারখাইন), আসহাব মিয়া (বটতলী), প্রণব সেন (আনোয়ারা), তরণী সেন মিত্র (বোয়াল গাঁও), মীর আহমদ (হাজীগাঁও), আবদুল মজিদ (হাজিগাঁও), নুরুল আমিন (বারখাইন), সৈয়দ নুর (বটতলী), মিলন মিত্র (আনোয়ারা), সজল মিত্র (আনোয়ারা), আবু নাছের চৌধুরী (বরুমচড়া), ফরহাদুর রশিদ (বারখাইন), শামসুল ইসলাম (বরুমচড়া), খোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী (বরুমচড়া), নুরনবী (তৈলারদ্বীপ), মো. সোলায়মান বাদশা (বটতলী), মো. ছাবের খাঁ (গোবাদিয়া), আবুল কালাম খাঁ (গোবাদিয়া), সৈয়দ আহমেদ (বরুমচড়া), দেলোয়ার হোসাইন (বটতলী), আবুল হাশেম (বারখাইন), মো. আবুল কাশেম (হাইলধর), হারুণ-অর-রশিদ (বারখাইন), আবু বক্কর (তৈলারদ্বীপ), আবদুল মোতালেব (গুন্দ্বিপ), আসহাব মিয়া (বটতলী), আব্বাস উদ্দিন (বরুমচড়া), আবুল হাশেম (তৈলারদ্বীপ), শামসুল ইসলাম চৌধুরী (দক্ষিণ বড়ুয়া পাড়া), মোরশেদুল ইসলাম (শোলকাটা), নুরুল ইসলাম আবু (বারখাইন), শামসুল ইসলাম চৌধুরী (বরুমচড়া), আবদুছ ছালাম (বরুমচড়া), হাসান সিকদার (বরুমচড়া), আবদুল হক (বরুমচড়া), নুরুল আমীন মেম্বার (বটতলী), আবদুস সাত্তার (দুধকুমড়া) প্রমুখ। [জামাল উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!