বগামারা রেলব্রিজ আক্রমণ (বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ)
বগামারা রেলব্রিজ আক্রমণ (বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ) পরিচালিত হয় ১৬ই অক্টোবর। এদিন মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। এর পরিণতিতে জনতার হাতে ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। আক্রমণে ব্রিজটি ধ্বংস হলে পাকবাহিনীর রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। এখান থেকে রাজাকারদের ১১টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
বাজিতপুরের হিলচিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর আসে যে, বগামারা রেলব্রিজে ২০ থেকে ২৫ জন রাজাকার সব সময় সশস্ত্র পাহারায় নিয়োজিত থাকে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মণ্ডলভোগ গ্রামের মো. শামসুদ্দিন ও জাল্লাবাদের কালা মিয়ার রেকির মাধ্যমে এ খবরের সত্যতা পাওয়া যায়। ১৫ই অক্টোবর সন্ধ্যায় হিলচিয়া ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপের যৌথ সভা হয়। সভায় নিকলীর রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্চু, মোজাম্মেল হক আবির, গুরইর মহিউদ্দিন আহমদ, আ. মোতালিব (বসু), ছয়চিড়ার অধ্যাপক মো. ইয়াকুব আলী প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। হিলচিয়া ক্যাম্প ইনচার্জ হাবিলদার বজলুর রহমান ও কাটাবাড়িয়ার আব্দুল বারী খান সভায় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। সভায় ১৬ই অক্টোবর ব্রিজ আক্রমণের দিন নির্ধারিত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐদিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে বগামারা রেলব্রিজের কাছাকাছি অবস্থান নেন। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোজাম্মেল হক আবির এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ভীত হয়ে ২০ জন রাজাকার অস্ত্র ফেলে পালানোর চেষ্টা করে। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে হাজারো জনতা দেশীয় অস্ত্রসহ ব্রিজ এলাকা ঘেরাও করে। পলায়নরত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার হাতে ধরা পড়ে। জনতার আক্রোশ ও পিটুনিতে তাদের মৃত্যু হয়। নিকলীর মোজাম্মেল হক আবির ও হাসান আলী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক দিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা ধানক্ষেত ও পানিতে ফেলে যাওয়া রাজাকারদের ১১টি রাইফেল উদ্ধার করেন।
সকাল ৯টার দিকে ট্রেনে করে পাকবাহিনীর একটি দল ব্রিজের উত্তর পাশে আসে। ট্রেন থেকে নেমেই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে গুলি ছুড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও নিরাপদ দূরুত্বে থেকে পাল্টা জবাব দেন। কিছুক্ষণ পর ভৈরব থেকে পাকসেনাদের আরেকটি দল ব্রিজের দক্ষিণ পাশে নামে। তারা ভারী মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থা অনুকূলে নয় বুঝতে পেরে বাউনাগাঁও ও পিপড়াদির ভেতর দিয়ে হিলচিয়া ক্যাম্পে ফিরে যান। [মো. সিরাজুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড