You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.21 | বগি-গাবতলা গণহত্যা (শরণখোলা, বাগেরহাট) - সংগ্রামের নোটবুক

বগি-গাবতলা গণহত্যা (শরণখোলা, বাগেরহাট)

বগি-গাবতলা গণহত্যা (শরণখোলা, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ২১শে অক্টোবর। বগি সাউথখালী ইউনিয়নের একটি গ্রাম। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামে গাবতলা বাজারের অবস্থান সাধারণভাবে এ বাজার বগি-গাবতলা নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা এর নাম দেন ‘জয়বাংলা বাজার’। বগি একটি বন্দর এবং এখানে সুন্দরবনের স্টেশন অফিস ছিল। বাওয়ালি ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সুন্দরবনে ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় এ স্টেশন থেকে পাশ নিতে হতো। বগি ছিল প্রধানত বাওয়ালী ও মৎস্যজীবীদের বন্দর। এ বন্দরে ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে সুন্দরবন সাবসেক্টরের একটি বিশেষ অগ্রবর্তী ঘাঁটি ছিল। এ ঘাঁটির ইনচার্জ ছিলেন কমান্ডার নুরুল ইসলাম কেশিয়ার ও শহীদ আলাউদ্দিন। এ অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে যুবকরা মুক্তিবাহিনীতে নাম লিখিয়ে সুন্দরবনে ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ নিত।
২১শে অক্টোবর সকালে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি গানবোট বগিতে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে আসে। ঘাঁটির উত্তরে গাবতলা ওয়াপদার ইজগেটে এম্বুশে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে পাকবাহিনী গানবোট থেকে ভারী গোলাবর্ষণ করে। গোলার মুখে মুক্তিবাহিনী টিকতে না পেরে পিছু হটে সুন্দরবনের ভেতরে নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা চলে যাওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গানবোট থেকে নেমে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ঢুকে নিরীহ লোকজনকে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। মাঠে কাজ করা অবস্থায় কয়েকজন কৃষকও এদের গুলিতে প্রাণ হারায়। গ্রামে ঢুকে তারা বাড়ি- বাড়ি গিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারীনির্যাতন ও গণহত্যা চালায়। এদিন পাকিস্তানিদের হাতে অন্তত ১৫-২০ জন হত্যার শিকার হয়। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলো— মোন্তাজ মোল্লা (পিতা জেন্নাত আলী মোল্লা, বগি), মো. বশারত খাঁন (পিতা তনু খান, গবতলা), দেলোয়ার হোসেন আকন (পিতা নেছার উদ্দিন আকন, বগি- গাবতলা), হিঙ্গুল তালুকদার (পিতা এনছান তালুকদার, বগি), আফতাব তালুকদার (পিতা মেছের তালুকদার, গাবতলা), সোহরাপ হোসেন (পিতা জেন্নাত আলী, গাবতলা) ও আ. মন্নান (পিতা আ. হাকিম, গাবতলা)। পরে কমান্ডার নুরুল ইসলাম ও হাবিলদার শহীদ আলাউদ্দিন একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গাবতলা বাজার এলাকায় এসে হানাদার বাহিনীর বুলেটে নিহতদের শহিদী মর্যাদায় সমাহিত করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং অভয় দেন যে, হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ জোরদার করা হবে।
বগি-গাবতলায় গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারীনির্যাতনে যারা পাকিস্তানি হানাদারদের পথ দেখিয়ে ও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে, তাদের মধ্যে আতাহার আলী (বগি), ইমান উদ্দিন (শান্তি কমিটি, চালিতাবুনিয়া), আ. ছত্তার খাঁন (উত্তর সাউথখালী), ইসমাইল ক্বারী (বগি), ইউনুস ক্বারী (বগি), আ. কাদের চৌকিদার (বকুলতলা), ইউসুফ ক্বারী (বগি), সেকান্দার আলী (তাফালবাড়ী) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। [আবু জাফর জব্বার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড