বকশীগঞ্জ গোহাটি গণকবর (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)
বকশীগঞ্জ গোহাটি গণকবর (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার পুরাতন গোহাটিতে অবস্থিত। এখানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোককে গুলি করে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। ২৬শে এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী গুলি করতে-করতে বকশীগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করে। এ-সময় বকশীগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মী মহাদেব পাল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। পাকসেনারা সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাঁকে গোহাটি গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়। ১৬ই সেপ্টেম্বর বকশীগঞ্জ-কামালপুর রোডে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আসাদুজ্জামান, আবুল হাসেম ও তাহের। এঁদের পাকসেনারা বকশীগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে লাশ গোহাটিতে পুঁতে রাখে।
পাকসেনারা শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার নাচনমহরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছকে ধরে ক্যাম্পে আটকে রাখে। ৯ই নভেম্বর কয়েকজন আলবদর ও পাকসেনা মোখলেছ চেয়ারম্যানকে পিঠে হাত বেঁধে ঢোল পিটিয়ে বকশীগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ করায়। এরপর পাকসেনারা তাঁকে পুরাতন গোহাটিতে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়। গোহাটির রাস্তা থেকে সামান্য দূরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারম্যানকে দাঁড় করানো হয়। পাকবাহিনীর নির্দেশে এক আলবদর সদস্য প্রকাশ্য দিবালোকে চেয়ারম্যানকে গুলি করে। গুলির আঘাতে চেয়ারম্যান যখন ছটফট করছিলেন, তখন দুজন পাকসেনা আরো দুই রাউন্ড গুলি করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে। দুদিন পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে গোহাটিতে কবর দেয়। এ গণকবরের তিন পাশে বাড়িঘর এবং অন্য পাশে একটি মজা পুকুর রয়েছে। পুকুরের ভাঙ্গনে গণকবরটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। [রজব বকশী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড