You dont have javascript enabled! Please enable it! বকশীগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মাতৃসদন) ভবন নারীনির্যাতন কেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

বকশীগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মাতৃসদন) ভবন নারীনির্যাতন কেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)

বকশীগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মাতৃসদন) ভবন নারীনির্যাতন কেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) এন এম হাইস্কুলের দক্ষিণে এবং বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা ভবনের পাশে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে এ ভবনের নাম ছিল ‘মাতৃসদন’। এ নির্যাতন কেন্দ্রে অসংখ্য নারী নির্যাতনের শিকার হন। অনেকে নির্মম নির্যাতনে মারা যান।
মাতৃসদন ভবনের পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কয়েকটি বাংকার ছিল। সেসব বাংকারে পাকসেনারা ছোট কামান ও ভারী অস্ত্রের মজুত গড়ে তুলেছিল। দোতলা ভবনের ওপর তলায় পাকসেনারা নারীনির্যাতনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। এটি ছিল মূলত বকশীগঞ্জ পাকক্যাম্পের কমান্ডার মেজর আইয়ুবের গোপন আস্তানা। সে তার সহযোগীদের নিয়ে এখানে নারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাত। ভবনের নিচ তলায় আলবদর ও রাজাকার রা থাকত ও সভা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিত। এ নির্যাতন কেন্দ্রের চারপাশে আলবদর, রাজাকার ও পাকসেনাদের সার্বক্ষণিক পাহারা থাকত। এখান থেকে তারা সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোর নানা পরিকল্পনা করত। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধাদের পিতা-মাতা ও ভাই-বোনদের আটক করে নির্যাতন-হত্যা, পাকসেনাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তা মেরামত ও ব্রিজ-কালভার্টে পাহারা বসানো, মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাকসেনাদের প্রদান এবং পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে নারীদের সরবরাহ করত।
রাজাকাররা বকশীগঞ্জ, দেওয়ানঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী এলাকা থেকে নারীদের জোরপূর্বক ধরে এনে মাতৃমঙ্গল ভবনের দোতলায় আটক করে রাখত। অকথ্য নির্যাতনের কারণে নিহত নারীদের মৃতদেহ বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের গভীর কুয়ায় ফেলে দেয়া হতো। এখানে সর্বমোট কতজন নারী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া দুরূহ। এসব নারীর পরিচয় জানতে না পারার প্রধান কারণ তাদের দূরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে এখানে আটক রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। স্বাধীনতার এত বছর পরও এ নির্যাতন কেন্দ্র সংরক্ষণ করা হয়নি। [রজব বকশী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড