You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.28 | বকশীগঞ্জ যুদ্ধ (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

বকশীগঞ্জ যুদ্ধ (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)

বকশীগঞ্জ যুদ্ধ (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) সংঘটিত হয় দুবার ২৮শে আগস্ট ও ৪ঠা ডিসেম্বর। বকশীগঞ্জ ইউনিয়নে স্থাপিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পকে কেন্দ্র পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এ-যুদ্ধ হয়। উভয় যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সেনা হতাহত হয়। এ-যুদ্ধের পরিণতিতে বকশীগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়।
২৬শে এপ্রিল বকশীগঞ্জে অনুপ্রবেশের পর পাকবাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকার গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে দুটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে। মেজর আইয়ুবের নেতৃত্বে বকশীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে পাঞ্জাবি সৈন্যদের এবং উলফাতুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পে ৪ কোম্পানি প্যারামিলিটারি ফোর্সের সমাবেশ ঘটায়। উভয় ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে তাদের বেশ কয়েকটি দুর্ভেদ্য বাংকার ছিল। এসব বাংকার মর্টার, কামান ও অন্যান্য ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করে পাকসেনাদের সতর্ক পাহারা বসানো হয়। এছাড়া তাদের সহায়তায় ছিল শান্তি কমিটি রাজাকার ও আববলর বাহিনী।
পাকবাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা ২৮শে আগস্ট রাতে বকশীগঞ্জ ইউনিয়নস্থ পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের নিক্ষিপ্ত শেলের আঘাতে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়৷ এর আগে জুলাই মাসের এক রাতে মুক্তিযোদ্ধা হাকিমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বকশীগঞ্জ টেলিফোন অফিসের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিল। এসব অভিজ্ঞতার পটভূমিতে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনী-কে নিয়ে পাকিস্তানিদের এ ক্যাম্পে ৪ঠা ডিসেম্বর সকালে সাঁড়াশি আক্রমণ করেন। ভারতীয় মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রির কমান্ডার লে. কর্নেল কে এম ব্রার এ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সেনাদের সঙ্গে টিকরকান্দি ও টালিয়াপাড়ায় পাকসেনাদের তীব্র যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে বকশীগঞ্জ পাকিস্তানি ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আইয়ুব খানসহ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অনবরত গোলাবর্ষণে পাকসৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। টালিয়াপাড়া রণক্ষেত্রে নিহত মেজর আইয়ুব খানকে জিপে তুলে নিয়ে পাকসেনারা সদরে চলে যায়। বিকেলে বকশীগঞ্জ হাইস্কুল মাঠের উত্তর পাশে তাকে কবর দেয়। এ-যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক, আব্দুল বাছেদ টাপা, জালাল মিয়া, জালাল উদ্দিন, নূরল আমীন প্রমুখ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। টালিয়াপাড়া যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া পাকসেনারা রাতে জামালপুরের উদ্দেশে বকশীগঞ্জ ত্যাগ করে। ৫ই ডিসেম্বর বকশীগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। [রজব বকশী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড