বক্তাবলী যুদ্ধ (নারায়ণগঞ্জ সদর)
বক্তাবলী যুদ্ধ (নারায়ণগঞ্জ সদর) সংঘটিত হয় ২৯শে নভেম্বর মধ্যরাতে। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর এ-যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৭-৮ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং ১৭-১৮ জন আহত হয়। ১৩৯ জন সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং ২০০ জনের মতো আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি শেষ হয়ে গেলে তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হন।
বক্তাবলী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন নারায়ণগঞ্জের গ্রুপ কমান্ডার মাহফুজুর রহমান মাফুজ। এতে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— বরিশালের উজিরপুরের নুরুল ইসলামের গ্রুপ ও শাহজাহান গ্রুপ, মুন্সিগঞ্জের বিদ্যুৎ-এর গ্রুপ এবং সিরাজুল ইসলামের গ্রুপের আমিনুর, আজহার হোসেন, দুলাল, হাফিজুর রহমান, মতিউর রহমান, হালিম আজাদ, আব্দুর রহমান, আব্দুল আজিজ, মো. সলিমুল্লাহ প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর, লক্ষ্মীনগর, গোপালনগর, রামনগর ও গঙ্গানগরে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। এ ঘাঁটিগুলোতে ২০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। এখানকার গ্রামবাসীরা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করে। পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের মাধ্যমে এ খবর জানতে পারে। ২৯শে নভেম্বর মধ্যরাতে ঘন কুয়াশার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী নদীপথে দুদিক থেকে বক্তাবলী ঘেরাও করে। অসংখ্য ছোট- বড় সাজোয়া যুদ্ধযান ও লঞ্চভর্তি কয়েক হাজার পাকিস্তানি সেনা ডিক্রিরচর, কুরের পার, রাজাপুর, গোপালনগর, মধ্যনগর ও আকবরনগর গ্রামের পাশে নদীর পারে অবস্থান নেয়। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ জাহাজ থেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে তারা গ্রামগুলোর অবস্থান প্রত্যক্ষ করে। বিপুল আলোর ঝলকানিতে গ্রামের মানুষ জেগে ওঠে। প্রাণভয়ে গ্রামবাসীরা এলোপাতাড়ি দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এ-সময় গ্রামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলাযোদ্ধাসহ মুক্তিযোদ্ধারা মধ্যনগর, রাজাপুর, ডিক্রিরচর ও গোপালনগরের ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বুড়িগঙ্গার তীরে পৌঁছে পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ করে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে। সবগুলো জাহাজ থেকে তারা একযোগে মেশিনগান, এসএলআর-সহ ভারী অস্ত্রের গুলি এবং শেল নিক্ষেপ শুরু করে। ৫টি ক্যাম্পের ২০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা ৬টি গ্রামের নদীর পাড়ে একযোগে পাকিস্তানি সেনাদের রামনগর ও গঙ্গানগরে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। এ ঘাঁটিগুলোতে ২০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। এখানকার গ্রামবাসীরা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করে। পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের মাধ্যমে এ খবর জানতে পারে। ২৯শে নভেম্বর মধ্যরাতে ঘন কুয়াশার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী নদীপথে দুদিক থেকে বক্তাবলী ঘেরাও করে। অসংখ্য ছোট- বড় সাজোয়া যুদ্ধযান ও লঞ্চভর্তি কয়েক হাজার পাকিস্তানি সেনা ডিক্রিরচর, কুরের পার, রাজাপুর, গোপালনগর, মধ্যনগর ও আকবরনগর গ্রামের পাশে নদীর পারে অবস্থান নেয়। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ জাহাজ থেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে তারা গ্রামগুলোর অবস্থান প্রত্যক্ষ করে। বিপুল আলোর ঝলকানিতে গ্রামের মানুষ জেগে ওঠে। প্রাণভয়ে গ্রামবাসীরা এলোপাতাড়ি দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এ-সময় গ্রামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলাযোদ্ধাসহ মুক্তিযোদ্ধারা মধ্যনগর, রাজাপুর, ডিক্রিরচর ও গোপালনগরের ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বুড়িগঙ্গার তীরে পৌঁছে পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ করে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে। সবগুলো জাহাজ থেকে তারা একযোগে মেশিনগান, এসএলআর-সহ ভারী অস্ত্রের গুলি এবং শেল নিক্ষেপ শুরু করে। ৫টি ক্যাম্পের ২০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা ৬টি গ্রামের নদীর পাড়ে একযোগে পাকিস্তানি সেনাদের নৌবহরের দিকে রাইফেল ও এসএলআর-এর গুলি ছুড়তে থাকেন। ৪ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর ভোর ৫টার দিকে গোলাগুলি বন্ধ হয়। এ-সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ১৪টি গ্রামের ৩৫ হাজারের মতো গ্রামবাসী ও ৫০ হাজারের মতো শরণার্থীর বেশির ভাগকেই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সহায়তা করেন।
সকাল ৭.৩০টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একযোগে ডিক্রিরচর, কুরেরপার, রাজাপুর, গোপালনগর, মধ্যনগর ও আকবরনগরের পাশ দিয়ে গুলিবর্ষণ করতে-করতে গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে। সবগুলো গ্রাম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করেন। প্রচণ্ড কুয়াশা থাকার কারণে পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে ঢুকেই মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের শিকার হয়। লক্ষ্মীনগর পূর্বপাড়া কবরস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জের গ্রুপ কমান্ডার মাহফুজুর রহমান মাফুজ, তমিজউদ্দিন রিজভী, জয়নাল টুলু ও রমজান, আকবরনগর পয়েন্টে কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, আজাহার, জয়নাল আবেদিন, আবদুল হালিম, শাহাবুদ্দিন, ফজলুল করিম ও আতাউর রহমান, গোপালনগর ক্যাম্প থেকে ফয়েজ আহমেদ, বাচ্চু কমান্ডার ও খোকা, ডিক্রিরচর পয়েন্টে আবুবকর, খোরশেদ আলম ও হাবিবুল্লাহসহ ২০০ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। দিনের আলো বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পিছু হটে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রামে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করে অধিকাংশ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং বহু মানুষকে হত্যা করে। বক্তাবলী যুদ্ধে ৭-৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ১৭-১৮ জন আহত হয়। অন্যদিকে পাকসেনাদের গুলিতে ১৩৯ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং ২০০ জনের মতো আহত হয়। বক্তাবলীর কানাইনগর ছোবহানিয়া হাইস্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড