You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে ফেনী সদর উপজেলা - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে ফেনী সদর উপজেলা

ফেনী সদর উপজেলা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ফেনী জেলার সবকটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীগণ বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। নির্বাচনের পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ফেনীর সংসদ সদস্যগণ ২৭শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকায় চলে আসেন। উদ্দেশ্য ১লা মার্চ হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে যোগ দেয়া। সে বৈঠক ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- ঐ বৈঠকে ৩রা মার্চের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও কৌশল নির্ধারণে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখার কথা। কিন্তু ১লা মার্চ হঠাৎ করে ৩রা মার্চের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণা সমগ্র বাংলাদেশের ন্যয় ফেনীর সাধারণ মানুষকেও প্রচণ্ডভাবে বিক্ষুব্ধ করে এবং এর প্রতিবাদ জানাতে তারা রাস্তায়-রাস্তায় মিছিল বের করে। সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে দেখা দেয় চরম অসন্তোষ। ফেনীর ট্রাঙ্ক রোড মাইজদী সড়ক, চিটাগাং সড়ক সর্বত্র আকাশ-বাতাস মুখরিত করে স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা স্লোগানে-স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে। এদিকে সংগ্রামী ছাত্রসমাজ ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। অতঃপর প্রত্যেক জেলা ও মহকুমায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। কেন্দ্রীয় আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফেনীতে মহকুমা ছাত্রলীগ সভাপতি ও ফেনী কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি জয়নাল আবেদীন (সাবেক সংসদ সদস্য), মহকুমা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর, ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও সোনাগাজীথানা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তাহের ভূঁঞা, ফেনী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁঞা, সাজেদুল আলম জামসেদ, ওয়াজি উল্যা ভূঁঞা ও আনিসুল হককে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ফেনী শাখা গঠিত হয়। থানা পর্যায়েও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কাজী নুর নবী, খোন্দকার মোজাম্মেল হক, শাজাহান কবির (স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি), শাজাহান কবির (শর্শাদি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক), মোহাম্মদ মুসা মিয়া, লক্ষণ চন্দ্র বণিক, হাফেজ আহম্মদ, কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, গোলাম কবির ভূঁঞা, গোলাম কিবরিয়া ভূঁঞা, এয়ার আহম্মদ, জামাল উদ্দিন ছবু প্রমুখ ছাত্রনেতা এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র- জনতার সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। ৩রা মার্চ বিকেলে ফেনী ট্রাংক রোডে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৩রা মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সমগ্র বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলন- শুরু হয়। মূলত সেদিন থেকেই অন্যান্য জেলার মতো ফেনীতেও পাকিস্তান সরকারের কোনো প্রশাসনিক কার্যক্রম ছিল না। ফেনীর বেসামরিক প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী ফেনীতে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সমাবেশে কোনোরূপ বাধা দেয়নি। ইতোমধ্যে খাজা আহমেদ এমএনএ, এ বি এম তালেব আলী এমপিএ-সহ অন্যরা ঢাকা থেকে ফেনীতে ফিরে আসেন।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান)-এ এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তাঁর ঐ ভাষণ শোনার জন্য সারাদেশের মতো ফেনীর মানুষজনও গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু রেডিওতে সে ভাষণ প্রচারিত না হওয়ায় তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরদিন ৮ই মার্চ ভাষণটি প্রচারিত হয়। ভাষণ শোনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার প্রেরণা জেগে ওঠে। খাজা আহমেদ এমএনএ-এর বাঁশপাড়াস্থ বাসায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি তারিখ আ স ম আবদুর রব এক সাংগঠনিক সফরে ফেনী এসে খাজা আহমেদ এমএনএ- এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্দোলন সম্পর্কে মত বিনিময় করেন। বিকেলে ফেনী জি এ একাডেমিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে ছাত্ররা পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। সমাবেশে আবদুর রব বলেন বিনা রক্তপাতে কোনো সামরিক সরকার জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। পাকিস্তানি সামরিক সরকারও তা করবে না।
ঐদিন সন্ধ্যার পর আন্দোলনের কর্মসূচি এবং করণীয় সম্পর্কে খাজা আহমেদ এমএনএ-এর বাঁশপাড়াস্থ বাসভবনে ছাত্রনেতাদের নিয়ে ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের নেতা বোরহান উদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ভিপি জয়নাল আবেদীন, মোশারফ হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেদিন থেকে ফেনীতে স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতার মধ্যে নতুন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
২৩শে মার্চ ছিল পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবস। এদিন কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র ফেনীতে পাকিস্তানি পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়। ২৪ ও ২৫শে মার্চ সারাদিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলে। অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকে মিটিং-মিছিলে যেসব স্লোগান উচ্চারিত হয়, সেগুলোর মধ্যে ছিল ‘জয় বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’, “পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জিন্না মিয়ার পাকিস্তান, আজিমপুরের গোরস্থান’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব’ ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ শুনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছিল যে, শেখ মুজিব তাঁর ভাষণে প্রকারান্তরে স্বাধীনতারই ডাক দিয়েছেন। তাই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৬ই মার্চ থেকে একদিকে আলোচনার নামে প্রহসন চালাচ্ছিল, অপরদিকে সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। প্রতিদিন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আকাশ ও নৌ পথে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সৈন্য এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ গোলা-বারুদ এনে জড়ো করছিল।
ফেনী কলেজের শিক্ষক রফিক রহমান ভূঁইয়া তখন ২৫ বছরের যুবক। তাঁর এবং তাঁর তরুণ সহকর্মী মোখলেছুর রহমান খান, ক্যাপ্টেন মুজিবর রহমান খান, অধ্যাপক ফজলুল হক, অধ্যাপক এফ কে খান প্রমুখের প্রেরণায় ছাত্র- ছাত্রীরা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।
২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়, বাঙালিদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে যায় বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই রাতে বিশ্বের ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যা চালায় ঢাকার রাজাররাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। তারা ঢাকার ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তা ইপিআর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয়। নোয়াখালীতে সে বার্তা গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল করিম। তিনি উক্ত বার্তা জেলা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আব্দুল মালেক উকিল এমএনএ ও ফেনী মহকুমা সংগ্রাম পরিষদকে অবহিত করেন। এরই মধ্যে নোয়াখালী টাউন হলে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা সরবরাহ শুরু হয়। ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তাঁর সেই ঘোষণা পাঠ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জোগায়।
২৬শে মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও ফেনী জেলা ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত মুক্ত ছিল। এ-সময় জেলার সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবসরপ্রাপ্ত, ছুটি ভোগরত ও পালিয়ে আসা বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, ইপিআর এবং আনসারদের খুঁজে আনার জন্য ফেনী সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিকে লোক পাঠানো হয়। তখন ফেনী থানার মালখানায় সংরক্ষিত সকল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা-বারুদ ওসি মোহাম্মদ আলীর সহযোগিতায় সংগ্রহ করে খাজা আহমেদ এমএনএ- এর নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। শহরে অবস্থিত পুলিশ, ইউওটিসি, আনসার ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ফেনী কলেজ, পিটিআই, ফেনী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও ঈদগাহ মাঠে প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণে ইউওটিসি ও বিএনসিসি-র ডামি বন্দুক, বাঁশের লাঠি, পোড়া মাটির তৈরি ডামি গেনেড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। শত্রুর ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপের পর নিরাপদে ফিরে আসার কৌশলও শেখানো হয়।
অধ্যাপক রফিক রহমান ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ ও মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ২৫শে মার্চের পর থেকেই ফেনীর উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ঘুরে- ঘুরে কাজ করেন। তিনি প্রশিক্ষণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে প্রবেশ এবং ভারত থেকে দেশে ফিরে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ভারতে অবস্থানরত খাজা আহমেদ এমএনএ-এর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তাঁর ছাত্র রাজাপুরের মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল হক সবুজ মাঝে-মধ্যে খাজা আহমেদের নিকট থেকে যুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন খবর তাঁর নিকট পৌঁছে দিতেন। অধ্যাপক রফিক এবং অন্যরা রাজাপুর, কৈখালী, সিন্দুরপুর প্রভৃতি এলাকায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন এবং সংগৃহীত অর্থ খাজা আহমেদের নিকট পৌঁছে দিতেন। ফেনী জেলায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন খাজা আহমেদ এমএনএ।
মুক্তিযুদ্ধকালে ফেনী উপজেলা ছিল ২নং সেক্টরের অধীন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন খালেদ মোশারফ (এপ্রিল-অক্টোবর) এবং মেজর এ টি এম হায়দার (অক্টোবর-ডিসেম্বর)। সাব- সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম। ফেনী জেলা বিএলএফ কমান্ডার ছিলেন জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), জহির উদ্দিন বাবর, ডেপুটি কমান্ডার (সামরিক) জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এবং ডেপুটি কমান্ডার (গোয়েন্দা) কাজী ফরিদ আহম্মদ। থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন কাজী নুর নবী এবং সহ-অধিনায়ক ছিলেন মাহফুজুল হক।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই বিলোনিয়া বিওপি থেকে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা পালিয়ে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। অপরদিকে বিওপি থেকে কয়েকজন অবাঙালি সৈনিক ২৬শে মার্চ ফেনী বিমান বন্দর সংলগ্ন সিও (উন্নয়ন) অফিসে এসে অবস্থান নেয়। তারা যে-কোনো সময় ফেনীতে আক্রমণ চালাতে পারে এরূপ খবর খাজা আহমেদ এমএনএ এবং জেলা হেডকোয়ার্টার্স মাইজদীতে জানানো হয়। এ খবর পাওয়ার পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করার পূর্বেই তাদের আক্রমণ করতে হবে। উল্লেখ্য যে, আগে থেকেই হাজার-হাজার নিরস্ত্র জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিও অফিস ঘিরে রেখেছিল।
২৭শে মার্চ সকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সিও অফিস ঘিরে রাখা সাধারণ জনতাকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। মাইজদী ও ফেনীর বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পুলিশ ও ইপিআর সদস্যরা ৩০৩ রাইফেল নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সারাদিন ও সারারাত উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। ফেনী প্রতিরোধ যুদ্ধ-এ ২৭ জন আনসার সদস্য শহীদ এবং ৫০ জন আহত হন। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গোলাম মাওলা, সুবেদার সিদ্দিক আহম্মেদ, সুবেদার আবু আহম্মেদ এবং অধ্যাপক মজিবর রহমান খান এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
২৮শে মার্চ ভোর নাগাদ ফেনী ও নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরো সামরিক বাহিনীর বাঙালি সৈনিকরা এসে এ- যুদ্ধে যোগ দেন। এতে যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয়। বাঙালি সৈনিকরা ক্যাপ্টেন মাওলার নির্দেশে ক্রলিং করে সিও অফিসের কাছাকাছি পৌঁছে যান। সকাল ১০টার দিকে ৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য সিও অফিসের দোতলা থেকে নেমে এসে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে যুদ্ধ থেমে যায়। চারদিকে সমবেত হাজার-হাজার বিক্ষুদ্ধ জনতা সিও অফিসের দিকে দ্রুত গতিতে ছুটে এসে বাঙালি সৈনিকদের কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে ৯ জন পাকিস্তানি সৈনিককে পিটিয়ে হত্যা করে। জনতা তাদের লাশ টেনে-হিঁচড়ে মিছিল সহকারে ফেনী শহরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে খাজা আহমেদ এমএনএ, এ বি এম তালেব আলী এমপিএ ও ছাত্রনেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পাকিস্তানি সৈন্যদের লাশগুলো ফেনী শহরের রাজারঝি দিঘির পূর্বপাড়ে দাফন করা হয়।
১৪ই এপ্রিল থেকে খবর আসতে থাকে যে, লাকসাম হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাপকভাবে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফেনীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফেনীর ওপর হানাদার বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত হয়ে প্রতিরোধ উঠিয়ে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ২৩শে এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তিনদিক দিয়ে এসে পাকিস্তানি সৈন্যরা ফেনী শহরে প্রবেশ করে। ফেনীতে প্রবেশ করে তারা ফেনী কলেজ, ফেনী পাইলট স্কুল, ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, দোস্ত টেক্সটাইল মিলস্, ফেনী স্টেডিয়াম, ফেনী রেলওয়ে স্টেশন, মোহাম্মদ আলী বাজার, পাঁচগাছিয়া কৃষি খামার, মহিপাল বিদ্যুৎ অফিস রেস্ট হাউস, দেওয়ানগঞ্জ মোক্তার বাড়ি, রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ধুমঘাট, সিও অফিস, ফেনী ট্রাংক রোড, গোলকানন্দ ঔষধালয় বিল্ডিং এবং ধলিয়া হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে। তবে ফেনী শহরে হানাদার বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি ছিল ফেনী পাইলট হাইস্কুল ও ফেনী কলেজ। ফেনী কলেজের অডিটোরিয়াম ছিল অন্যতম নির্যাতনকেন্দ্র।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফেনী দখল করেই স্বাধীনতাবিরোধী বেলাল খানের সহযোগিতায় জামায়াতে ইসলামী মুসলিম লীগ, পিডিপি- নেজামে ইসলামী- প্রভৃতি দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। এ উপজেলায় স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিবর্গ, হলো- শামছুদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী (সভাপতি, ফেনী মহকুমা কনভেনশন মুসলিম লীগ), নুর মোহাম্মদ চৌধুরী (সভাপতি, কাউন্সিল মুসলিম লীগ), রুহুল আমিন ও আবদুল গোফরান (রাজাপুর), মিজানুর রহমান (ফাজিল ঘাট), খায়েজ আহম্মদ (ফেনী মহকুমা মুসলিম লীগ নেতা ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) প্রমুখ।
২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত ফেনী ছিল সম্পূর্ণ মুক্ত এলাকা। তবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দুবার পাকিস্তানি সেনারা বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করে। এতে বামপন্থী নেতা আবদুল অদুদ তাঁর পা হারান। ২৩শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী ফেনী শহর দখলে নেয় এবং ২৪শে এপ্রিল ধর্মপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর ও মটুয়া গ্রামে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে প্রায় অর্ধশত নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। এটি মজলিশপুর-মটুয়া গণহত্যা- নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনীর প্রতিটি ক্যাম্পই ছিল এক- একটি চর্চার সেল। এ-সকল ক্যাম্পের আশপাশের গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ তাদের হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়। দীর্ঘ ৯ মাসে কত হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব নয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফেনী শহরে প্রবেশকালে দেওয়ানগঞ্জ, আমতলী ও শহরতলীতে বহু বাড়িঘরে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে। শহরতলীর বহু মানুষকে তারা হত্যা করে। হানাদার বাহিনী জোয়ার কাছাড় গ্রামে এক নির্মম গণহত্যা চালায়। জোয়ার কাছাড় গণহত্যায় বহু লোক শহীদ হন। তাদের মধ্যে ১৯ জনের নাম জানা গেছে।
এ উপজেলায় ফেনী পাইলট স্কুল, ফেনী কলেজ, ফেনী স্টেডিয়াম ও পাঁছগাছিয়া কৃষি খামার ছিল প্রধান নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির।
ফেনী সদর উপজেলায় ২টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সে দুটি হলো— ফেনী পাইলট কলেজ মাঠ গণকবর- ও সুলতানপুর কালীবাড়ি গণকবর। উভয় গণকবরেই বহু সাধারণ মানুষকে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হয়।
এ উপজেলায় পাকবাহিনী, রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তা হলো- ধলিয়া রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন- এবং দৌলতপুর ক্যাম্প অপারেশন। ধলিয়া রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ অপারেশনে রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে না পেরে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের ক্যাম্প থেকে ১০টি চাইনিজ রাইফেল ও প্রচুর গোলা-বারুদ উদ্ধার করেন। দৌলতপুর ক্যাম্প অপারেশন ২৩শে অক্টোবর সংঘটিত হয়। এতে পাকবাহিনীর একজন মেজর ও একজন সৈন্য ঘটনাস্থলে নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় আরো ৪ জন পাকসেনা ধরা পড়ে। তাদের নবাবপুর বাজারের পাশে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়।
৩রা ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী – ফেনীর ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ চালায়। ১০ম ইস্ট বেঙ্গল ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৫ই ডিসেম্বর গভীর রাতে ফেনী ত্যাগ করে কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে রাজাকাররাও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। ৬ই ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ফেনী সদর উপজেলার দখল নেয়। মুক্ত হওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনতা লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে বিজয় মিছিলের মাধ্যমে উল্লাস প্রকাশ করে।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মমতাজ, বীর উত্তম (পিতা সামছুদ্দিন আহম্মেদ, জগইরগাঁও), এ ডব্লিউ চৌধুরী, বীর উত্তম, বীর বিক্রম (পিতা ডা. শামসুল হুদা চৌধুরী), নুরুল ইসলাম, বীর বিক্রম (পিতা মুন্সী আহম্মদউল্লাহ, লক্ষ্মীপুর), আবদুস সালাম, বীর বিক্রম (পিতা দারগ আলী মিস্ত্রী, মধ্যম কাছাড়), ক্যাপ্টেন আলী নেওয়াজ, বীর প্রতীক- (পিতা ফেলু মিয়া, শিবপুর), সিপাহি আব্দুল বাসেত, বীর প্রতীক- (পিতা সুলতান আহম্মেদ, ধর্মপুর), নেভাল কমান্ডো মোহাম্মদ আমীর হোসেন, বীর প্রতীক- (পিতা হাজী দলিলুর রহমান, নৈরাজপুর), সুবেদার মেজর মোজাফফর আহম্মেদ, বীর প্রতীক (পিতা মৌলভী শেখ আহম্মেদ, সোনাপুর) ও মো. ইদ্রিস, বীর প্রতীক- (পিতা সোনা মিয়া, মধ্যম ধলিয়া)।
উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আব্দুস সালাম, বীর বিক্রম (সালদা নদী যুদ্ধে শহীদ), সিপাহি আব্দুল বাসেত, বীর প্রতীক (১২ই নভেম্বর যুদ্ধে শহীদ), নুরুল ইসলাম, বীর বিক্রম (৮ই জুন বিলোনিয়া যুদ্ধে শহীদ), সামছল হক মজুমদার (পিতা রজব আলী মজুমদার, উকিলপাড়া), রণজিৎ কুমার চন্দ (পিতা ননী গোপাল চন্দ, রামপুর), আবদুস সাত্তার (পিতা কলিম উদ্দিন, দেবীপুর), খুরশিদ আলম (পিতা খাদেম আলী, মটবী), আবদুল মান্নান (পিতা আবদুল সোবহান, দমদমা), হায়াতুন নবী (পিতা ছৈয়দুল হক, লক্ষ্মীপুর), মকবুল আহম্মদ (পিতা হাজী রুস্তম আলী, রাস্তার খিল), আবদুস সোবহান (পিতা আতর আলী, জোয়ার কাছার), আবুল বাসার (পিতা জালাল আহম্মদ, ধর্মপুর), শাহ আলম (পিতা আবদুল মান্নান, দক্ষিণ ছনুয়া), সাহাব উদ্দিন (পিতা আহম্মদ উল্ল্যাহ, পূর্ব ফাজিলপুর), মোস্তফা (পিতা লাল মিয়া, ফাজিলপুর), মো. মোস্তফা (পিতা আবদুর রব, চন্ডিপুর), জাগির আহম্মদ (পিতা আবদুল হক, লেমুয়া ধর্মপুর), নাছির আহম্মদ (পিতা আবদুল গফুর, নৈরাজপুর) এবং আবুল বাসার (পিতা সুলতান আহম্মদ, ধর্মপুর)। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগুলো হলো- ফেনী সিও অফিসের সামনে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, ফেনী সুলতানপুর কালিবাড়ীর মন্দিরের সামনে বটবৃক্ষের নীচে নির্মিত গণকবর স্মৃতিফলক, ফেনী শহরের কেন্দ্রস্থল রাজারঝি দিঘির পাড়ে ফেনী জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিফলক, ফেনী পাইলট কলেজ মাঠে গণকবরের ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধ, ফেনী শহরের পশ্চিমে নোয়াখালী মহাসড়কে খোনার পুকুরপাড়ে অজ্ঞাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের ওপর নির্মিত স্মৃতিফলক, ফেনী জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে শহরের কেন্দ্রস্থল কারাগার ও ফেনী কলেজের সংযোগ স্থলে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ, ফেনীর পুরনো বিমান বন্দর সড়কে প্রতিষ্ঠিত শহীদ সালাহ উদ্দিন মমতাজ উচ্চ বিদ্যালয়, সদর উপজেলাধীন ৪নং ধর্মপুর ইউনিয়নে শহীদ আবদুল বাসেত সড়ক, ফেনীর কৃতী সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক খাজা আহমেদ স্মরণে বাঁশপাড়ায় খাজা আহমেদ সড়ক, ফেনী শহরে রামপুর বালিকা বিদ্যালয়ে খাজা আহমেদ ভবন, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের স্মরণে শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক (ফেনী প্রধান সড়ক থেকে মহিপাল পর্যন্ত), শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভিনের নামে ফেনী শহরে সেলিনা পারভিন সড়ক, শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের স্মরণে নির্মিত শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তন, ফেনী শহরে শহীদ সামছল হক ব্যাটালিয়ন সড়ক, ফেনী শহরে শহীদ কামাল উদ্দিন সড়ক, ফেনী কলেজে শহীদ ফজলুল হক ছাত্রাবাস ও শহীদ মাওলানা ওয়াজেদ উদ্দিন ছাত্রাবাস। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড