You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক ফোরকান উদ্দিন

ফোরকান উদ্দিন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) নায়েক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালের ১৪ই এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার থোল্লাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুস ছাত্তার মিয়া এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন মুক্তামা। ৮ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে ফোরকান উদ্দিন দ্বিতীয়।
তিনি ১৯৬৮ সালে নবীনগর উপজেলার দড়িকান্দি-বাড্ডা আসমতেন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৮ সালের ১৪ই নভেম্বর ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এ ওয়ারলেস অপারেটর পদে তিনি যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ইপিআর-এর ১০নং উইং রংপুরে কর্মরত ছিলেন। ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক ভাষণের পর ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনের পরামর্শক্রমে কুড়িগ্রামের এসডিও আব্দুল হালিমের সহযোগিতায় তিনি উলিপুর থানায় একটি অস্থায়ী ওয়ারলেস স্টেশন স্থাপন করেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকবাহিনী নিরীহ-নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথম পর্যায়ে ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, পাটেশ্বরী, জয়মনিরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রশিক্ষণ দেন। এরপর তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ফোরকান উদ্দিন সেক্টর কমান্ডার এম কে বাশার এবং ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনের নেতৃত্বে ৬নং সেক্টরের অধীনে রংপুরের সাহেববাজারে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ২০শে নভেম্বর লেফটেন্যান্ট সামাদের নেতৃত্বে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার রায়গঞ্জে মুক্তিবাহিনীর দুটি কোম্পানি পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা গুলি চালায়। যুদ্ধে ফোরকান উদ্দিনের পাশে যুদ্ধরত অবস্থায় লেফটেন্যান্ট সামাদ পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তারপরও ফোরকান উদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যান এবং রায়গঞ্জ দখল করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েক ফোরকান উদ্দিনকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি বর্তমানে মৌলভী বাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রামনগর মনিপুরীপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসা. সমিরন বেগম। তাঁদের ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে একজন নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘টুঙ্গিপাড়ার মাজার’, ‘বীরের জননী’, ‘দুঃখিনী বাংলা মা’ প্রভৃতি নাটক রচনা করেন এবং সেগুলোর নির্দেশনা দেন। এজন্য মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক তিনি ২০১৯ সালে গুণীজন সম্মাননা পেয়েছেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!