বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় নির্যাতনকেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)
বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় নির্যাতনকেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ২৬শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বকশীগঞ্জে প্রবেশ করে প্রথমে বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। জুন মাসের প্রথমদিকে তারা উলফাতুন্নেছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আরেকটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পে তারা নারীনির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তুলে অসংখ্য নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালায়।
ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত বকশীগঞ্জের গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এ ক্যাম্পের কমান্ডার ছিল হাবিলদার ছফি। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলের ক্যাম্পে তাদের ভারী অস্ত্রের মজুত ছিল। এখান থেকে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ কামালপুর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতো। এ বিদ্যালয়ের ভেতরে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি টিনের ঘর ছিল। এটি ছিল ছাত্রীদের শ্রেণি কক্ষ। বিদ্যালয়ের ভেতরে পানফুল নামে একটি ছাত্রী নিবাস ছিল। এ ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষকে তারা নারীনির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের কিছু সৈন্য চারিত্রিক স্খলন ও খুনের দায়ে পাকিস্তানের জেলে আটক ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে। এ স্কুলের ক্যাম্পে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় পাকবাহিনী দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী এলাকার নারীদের বন্দি করে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। এ নারীনির্যাতন কেন্দ্রে কত নারীর সম্মানহানি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পাকসেনাদের অকথ্য নির্যাতনে নিহতদের ছাত্রী নিবাসের পেছনে কবর দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর এখানে মেয়েদের হাড়, গলার চেইন, হাতের বালা, কানের ঝুমকো, মাথার খুলি ও চুল পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে এ বিদ্যালয়ের নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি চিহ্নিত হয়। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়নি। [রজব বকশী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড