You dont have javascript enabled! Please enable it! বকশীগঞ্জ এন এম হাইস্কুল মাঠসংলগ্ন বধ্যভূমি ও গণকবর (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

বকশীগঞ্জ এন এম হাইস্কুল মাঠসংলগ্ন বধ্যভূমি ও গণকবর (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)

বকশীগঞ্জ এন এম হাইস্কুল মাঠসংলগ্ন বধ্যভূমি ও গণকবর (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়।
বকশীগঞ্জ উপজেলায় অনুপ্রবেশের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানকার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে। ৪ কোম্পানি সৈন্য নিয়ে গঠিত এ ক্যাম্পের অধিনায়ক ছিল মেজর আইয়ুব খান। এ ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় মাঠের উত্তর পাশে একটি বধ্যভূমি ছিল। এ বধ্যভূমিতে পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অনেক মানুষকে হত্যা করে। স্থানীয় শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী পাকিস্তানিদের সহায়তা করে। এ বধ্যভূমিতে নিহতদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগ-এর নেতা-কর্মী ও স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ। নিহতদের এখানে হত্যা করে পুঁতে রাখা হতো।
পাকসেনারা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ করে। ক্যাম্পের আশপাশের এলাকার নিরীহ মানুষদের ধরে গুম, হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ করা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এখানে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। এখানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা গাজী আসাদুজ্জামানকে পাকসেনারা অমানুষিক নির্যাতন করে। তাঁর কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেও মুখ খোলেননি। কয়েকদিন পর পাকসেনারা এন এম উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এনে তাঁকে গুলি করে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে রাখে। বিদ্যালয়ের উত্তর কোণায় একটি পুকুর ছিল। মানুষের রক্তে এ পুকুরের জল লাল হয়ে গিয়েছিল। পুকুরপাড়ে ছিল একটি গভীর কূপ। পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের হত্যা করে এ কূপে ফেলে দিত। স্বাধীনতার পর এসব স্থান খননের সময় মানুষের হাড়, মাথার খুলি ও মেয়েদের পরিধেয় কাপড় ও অলংকারাদি পাওয়া যায়। এ বধ্যভূমিটি সংরক্ষিত হয়েছে এবং এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। [রজব বকশী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড