You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.30 | ফুলবাড়ীয়া যুদ্ধ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ফুলবাড়ীয়া যুদ্ধ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর)

ফুলবাড়ীয়া যুদ্ধ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর) সংঘটিত হয় দুবার ৩০শে জুন ও ৩০শে আগস্ট। এতে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ১ জন আহত হন। অপরপক্ষে ১ জন রাজাকার নিহত ও ২৪ বন্দি হয়।
কালিয়াকৈর থেকে ফুলবাড়ীয়া বাজারের দুরত্ব ২১ কিলোমিটার। অনেকটা দুর্গম এলাকা। চারদিকে গজারি বন পরিবেষ্টিত। শীতকালে পায়ে হাঁটা রাস্তা এবং বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া যাতায়াতের আর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানে পরপর দুবার যুদ্ধ হয়।
মে মাসের ২২ তারিখ পাকসেনারা কালিয়াকৈরে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে ফুলবাড়ীয়ায় ক্যাম্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে জুন মাসের ১ম সপ্তাহে স্থানীয় শান্তি কমিটি-র সদস্যদের নিয়ে ২টি গানবোটে নদীপথে ফুলবাড়ীয়া পৌঁছায় এবং ফুলবাড়ীয়া বাজার সংলগ্ন ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তজুমুদ্দিন সরকারের বাড়িতে অবস্থান নেয়। তারা তজুমুদ্দিন চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তি আক্কেল আলী সরকারের সহযোগিতায় এলাকার লোকজন নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং সেখানেই তাদের ট্রেনিংএর ব্যবস্থা করে। রাজাকার বাহিনী গঠনে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নলুয়ার হালিম মেম্বর তাদের সার্বিকভাবে সহায়তা করে। কয়েকদিন রাজাকারদের ট্রেনিং দেয়ার পর পাকবাহিনীর সদস্যরা কালিয়াকৈরে ফিরে যায়।
ফুলবাড়ীয়ার তজুমুদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প গঠনের সংবাদ টাঙ্গাইল জেলার সখীপুরে অবস্থানরত কাদেরিয়া বাহিনী- জানামাত্র এ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত মোমেন শাহজাহান (প্রয়াত এমপি) ও মির্জা মুজিবুর রহমান বিএসসি-র নেতৃত্বে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ৩০শে জুন সন্ধ্যায় ফুলবাড়ীয়া বাজার থেকে তজুমুদ্দিন চেয়ারম্যান ও আক্কেল আলী সরকারকে গ্রেফতার করেন। এ খবর রাজাকার ক্যাম্পে পৌঁছলে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ শুরু করে। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান বিএসসি ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং অপর একজন তরুণ যোদ্ধা আব্দুল আজীজ ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট ভারী অস্ত্র ও তেমন গোলাবারুদ না থাকায় তাঁরা গ্রেফতারকৃত তজুমুদ্দিন চেয়ারম্যান ও আক্কেল আলী সরকারকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থলের দিকে যাত্রা করেন। ফুলবাড়ীয়া বাজার থেকে পশ্চিম-উত্তর দিকে ৪ কিমি যাওয়ার পর ধৃত উভয়কে গোয়াইলা নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। এতে তজুমুদ্দীন চেয়ারম্যান নিহত হয় এবং আক্কেল আলী সরকার রাতের অন্ধকারে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবুর রহমান বিএসসি-কে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। পরে রাজাকাররা ফুলবাড়ীয়া বাজারে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে।
ফুলবাড়ীয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৩০শে আগস্ট দুপুর ১টার দিকে। এ দিনটি ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। পাকসেনাদের অবস্থান থেকে দূরে হওয়ায় স্থানীয় ও দূরাঞ্চলের লোকজন এখানে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচা করত। মুক্তিযোদ্ধা আফছার উদ্দীন বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার মো. আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে একটি ছিপা নৌকার মাল্লা সেজে গুলিবর্ষণ ও ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতে-দিতে হাটে প্রবেশ করে রাজাকার ক্যাম্প ঘেরাও করেন। হাটের লোকজন ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা মুহূর্তের মধ্যে অস্ত্রসহ ২৪ জন রাজাকারকে ধরে ফেলেন। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোহাম্মদ আলী আইএসসি, মোয়াজ্জেম হোসেন মিঠু, মইন উদ্দীন, হাসমত আলী, বাবর আলী মুন্সী প্রমুখ। [মো. মোয়াজ্জেম হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড