You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফেনাকাটা যুদ্ধ (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী)

ফেনাকাটা যুদ্ধ (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী) সংঘটিত হয় ৬ই মে। এতে ৩৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ফেনাকাটা স্থানটি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানা সদর থেকে বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের বাংলা বাজার সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালীর ইতিহাসে ফেনাকাটা একটি অতি পরিচিতি নাম। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি এবং ভারতের আকাশ বাণী- থেকে ফেনাকাটা যুদ্ধের খবরাখবর প্রচারিত হতো। ফেনাকাটায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনীর মধ্যে বহুবার যুদ্ধ হয়।
ফেনাকাটা স্থানে নোয়াখালী খালের ওপর যে পুলটি রয়েছে, তার নিচ দিয়ে নৌকায় করে মুক্তিযোদ্ধারা বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতেন এবং অস্ত্রশস্ত্র আনা-নেয়া করতেন। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানটি নিরাপদ রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। অপরদিকে পাকিস্তানি বাহিনী সর্বদা এখানে কড়া প্রহরা বসিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়তে বাধা সৃষ্টি করত।
এ অঞ্চলের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার লুৎফর রহমান প্রায় সময়ই এ রাস্তা রেকি করতেন। কিন্তু এম্বুশ করার মতো তদ্রূপ সুবিধাজনক স্থান ছিল না। ৬ই মে সুবেদার লুৎফর রহমান তাঁর দল নিয়ে ফেনাকাটায় এম্বুশ করে শত্রুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি দেখতে পান পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্য বোঝাই ৩টি ট্রাক চন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে পূর্ব দিকে চৌমুহনীর পথে এগিয়ে আসছে। ট্রাকগুলো কাছাকাছি আসামাত্র মুহূর্তের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুলো গর্জে ওঠে। অতর্কিত আক্রমণে হানাদার বাহিনী কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ে। তারা পজিশন নেয়ার আগেই ৩৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এতে একই নামের (ইসমাইল) ২ জন মুক্তিসেনা শহীদ হন। তাঁদের একজনের বাড়ি আমিশাপাড়া ইউনিয়নের কংসনগর গ্রামে। তাঁকে পরবর্তীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ-যুদ্ধে ইব্রাহিম নামে আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁকে জয়নারায়ণপুর মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদের পাশে দাফন করা হয় ৷
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সুবেদার লুৎফর রহমান ফেনাকাটা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাহার করেন। দুটি কারণে ফেনাকাটার যুদ্ধ আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রথমত, নোয়াখালীতে এটিই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। দ্বিতীয়ত, পাকবাহিনীর ভয়ে সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতে দ্বিধান্বিত ছিল। কিন্তু ফেনাকাটা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সৈন্যের প্রাণহানি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসী ভূমিকা সাধারণ মানুষকে নতুন করে উজ্জীবিত করে। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!