You dont have javascript enabled! Please enable it! ফুলতলা বাজার যুদ্ধ (জুড়ী, মৌলভীবাজার) - সংগ্রামের নোটবুক

ফুলতলা বাজার যুদ্ধ (জুড়ী, মৌলভীবাজার)

ফুলতলা বাজার যুদ্ধ (জুড়ী, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। এতে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়।
জুড়ী সাব-সেক্টর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ফুলতলা বাজার। এ বাজারে ছিল পাক হানাদারদের সর্ববৃহৎ ক্যাম্প। এটি সীমান্তের এক মাইলের মধ্যে অবস্থিত ছিল। তাই উভয়ের কাছেই এটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। একটি ছাউনি তৈরি করে ৩০ জনের একটি হানাদার কোম্পানি সার্বক্ষণিক এখানে অবস্থান করত। ভারী অস্ত্র ও গোলা-বারুদের সমাবেশ ঘটিয়ে বশারত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়-সহ আশপাশ এলাকাকে দুর্গ বানিয়েছিল তারা। গ্রাম থেকে নারীদের এনে আনন্দ-ফুর্তি করত এবং গ্রামবাসীদের হাঁস-মুরগি ও বাজারের মাছ লুট করে খেত।
এ-দেশীয় দোসররা তাদের পথঘাট চিনিয়ে দেয়া, নারীদের তথ্য সংগ্রহ এবং লুটপাট ও অগ্নি সংযোগে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিল। এ বিবেচনা থেকেও পাকহানাদার ও তাদের এ- দেশীয় দোসরদের শায়েস্তা করার প্রয়োজন দেখা দেয়। মুজাহিদ ক্যাপ্টেন এম এ জলিল মাসুক এ-যুদ্ধের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। দুটি অংশে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এক অংশে সরাসরি হামলার পরিকল্পনা এবং দ্বিতীয় অংশে রাজাকার দের জীবন্ত ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। দুইশ এমএফ, একশ এফএফ এবং ২০ জন জেএলডব্লিউ নিয়ে যুদ্ধ পরিকল্পনা সাজানো হয়। রাইফেল, এসএলআর প্রভৃতি অস্ত্র দিয়ে প্রথমে আক্রমণে নামে এম এ জলিল মাসুকের বাহিনী। এফএফ-দের মধ্যে রাঘনা-রানীবাড়ি ক্যাম্পের অধিনায়ক এম এ মোমিত আসুক উক্ত অভিযানে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আবুল কালাম, আবদুস ছাত্তার, মুকুল দেব, কুলেশ চন্দ্র চন্দ, অরুণ দে, ছাবিদ আলী, মর্তুজা আলী, আবদুল মতিন ওরফে মতিউর রহমান প্রমুখ এ-যুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করেন। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এটি দীর্ঘ এবং বৃহৎ যুদ্ধে রূপলাভ করেছিল। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এ- যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাঘনা-রানীবাড়ি ক্যাম্প থেকে ১ ফার্লংয়ের মধ্যে এসে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়। পাকহানাদাররাও প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে জবাব দিতে থাকে। তাই প্রথম দিনের যুদ্ধে হানাদারদের দমানো যায়নি। পরের দিনও একই অবস্থা। তারপরের দিনও একই চিত্র। জগদ্দল পাথরের মতো ক্যাম্প জুড়ে বসে থাকে পাকবাহিনী। অনবরত গুলি ছোড়া হচ্ছে। কিন্তু টলছে না হানাদার বাহিনী। ভেতরে ভেতরে আরো শক্তি ও অস্ত্রশস্ত্রের সংগ্রহ বাড়িয়ে চলে তারা।
মুক্তিবাহিনীও নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয় ২ ইঞ্চি মর্টার। প্রয়োজনে ভারতীয় বাহিনী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। নতুন উদ্যমে মুক্তিবাহিনী একদিন ভোরে পুনরায় হামলা করে। তখনও আযান শুরু হয়নি। সূর্যের লালিমা দেখা দেয়নি পূর্বাকাশে। একটানা ১০-১২ দিন এভাবে বারবার আক্রমণ পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু শেষের আক্রমণটি ছিল ভিন্নতর। ৩ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাকহানাদার বাহিনী। ২ জন পাকসেনার নিথর দেহ পড়ে থাকে ক্যাম্পে। ফুলতলা বাজার ক্যাম্পের পতন ঘটেছে – এ খবরে এলাকাবাসী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে চতুর্দিক মুখরিত করে তোলে। [হাসনাইন সাজ্জাদী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড