You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক ফারুক লস্কর - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক ফারুক লস্কর

ফারুক লস্কর, বীর প্রতীক (১৯৫১-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নুরউদ্দিন লস্কর এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। ফারুক লস্কর আড়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ৩ ভাই ও ৭ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি ১৯৬৮ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স-এ যোগদান করেন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি যশোর ইপিআর-এর ৫ নম্বর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা শুরু করলে ফারুক লস্কর সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রথম ৮নং সেক্টরে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, পরবর্তীতে মেজর এম এ মঞ্জুর নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের অধীন ভোমরা সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- পশ্চিমে অবস্থিত ভোমরা বন্দরটি মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনী উভয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভোমরার বিরাট একটি অংশ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে থাকলেও এখানে ছিল পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি। এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভোমরা অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৬ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ চালান এবং এতে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২১শে নভেম্বর পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালালে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। এতে ১২-১৩ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং পাকবাহিনী পিছু হটে। বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকবাহিনী আবারো মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং তাঁদের প্রবল চাপে পাকবাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এসব যুদ্ধে ফারুক লস্কর বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভোমরাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধরত অবস্থায় পাকবাহিনীর গুলিতে ফারুক লস্করসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভোমরা সীমান্তে তাঁদের সমাহিত করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সিপাহি ফারুক লস্করকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড